পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રાન્ક রবীন্দ্র-রচনাবলী 瞿 • সোহিনী বললে, “অন্তত একটা প্রমাণ পেয়েছি আমার আপন ঘরেই। আমার মেয়ে এমন আশ্চর্ধ রূপ পেল কোথা থেকে। বসম্ভের নানা ফুলের বেন— থাক, নিজের চোখে দেখলেই বুঝতে পারবে।” • i • দেখবার জন্তে উংস্থক হয়ে উঠল রেবতী। নাট্যের কোনো সরঞ্জাম বাকি ছিল না। সোহিনী তার রাধুনী বামুনকে সাজিয়ে এনেছে পূজারী বামুনের বেশে। পরনে চেলি, কপালে ফোটাতিলক, টিকিতে ফুল বাধা, বেলের আঠায় মাজ মোটা পইতে । গলায়। তাকে ডেকে বললে, “ঠাকুর, সময় তো হল, নীলুকে এবার ডেকে নিয়ে এসো।” নীলাকে তার মা বসিয়ে রেখেছিল স্তমলঞ্চে । ঠিক ছিল ডালি, হাতে সে উঠে আসবে, বেশ খানিকখন তাকে দেখা যাবে সকালবেলার ছায়ায়-আলোয়। ইতমধ্যে রেবতীকে সোহিনী তন্ন তন্ন করে দেখে নিতে লাগল। রঙ মস্বণ প্তামবৰ্ণ, একটু হলদের আভা আছে। কপাল চওড়া, চুলগুলো আঙুল বুলিয়ে বুলিয়ে উপরে তোলা। চোখ বড়ে নয় কিন্তু তাতে দৃষ্টিশক্তির স্বচ্ছ আলো জল জল করছে, মুখের মধ্যে সেইটেই সকলের চেয়ে চোখে পড়ে। নীচে মুখের বেড়টা মেয়েলি ধাচের মোলায়েম । রেবতীর সম্বন্ধে ও যত খবর জোগাড় করেছে তার মধ্যে ও বিশেষ লক্ষ্য করেছে একটা কথা। ছেলেবেলাকার বন্ধুদের ওর উপরে ছিল কান্নাকাটি-জড়ানো সেটিমেন্টাল ভালোবাসা। ওর মুখে ষে একটা দুর্বল মাধুর্য ছিল, তাতে পুরুষ বালকদের মনে মোহ আনতে পারত। । সোহিনীর মনে খটকা লাগল। ওর বিশ্বাস, মেয়েদের মনকে নোঙরের মতো শক্ত করে আঁকড়ে ধরার জন্যে পুরুষের ভালো দেখতে হওয়ার দরকারই করে না। বুদ্ধিবিস্তেটাও গৌণ। আসল দরকার পৌরুষের ম্যাগনেটিজম। সেটা তার স্বায়ুর পেশীর ভিতরকার বেতার-বার্তার মতো। প্রকাশ পেতে থাকে কামনার অকথিত মনে পড়ল, নিজের প্রথম বয়সের রসোন্মত্ততার ইতিহাস। ও যাকে টেনেছিল কিংবা যে টেনেছিল ওকে, তার না ছিল রূপ, না ছিল বিষ্ঠা, না ছিল বংশগৌরব। কিন্তু কী একটা অদৃশু তাপের বিকিরণ ছিল যার অলক্ষ্য সংস্পর্শে সমস্ত দেহ মন দিয়ে ও তাকে অত্যন্ত করে অনুভব করেছিল পুরুষমাস্থ্য বলে। নীলার জীবনে কখন একসময়ে সেই অনিবাৰ আলোড়নের আরম্ভ হবে এই ভাবনা তাকে স্থির থাকতে তি না। যৌবনের শেষ দশাই সকলের চেয়ে বিপদের দশা, সেই সময়টাতে সোহিনীকে অনেকখানি ভুলিয়ে রেখেছিল নিরবকাশ জ্ঞানের চর্চায়। কিন্তু দৈবাৎ সোহিনীর মনের জমি ছিল স্বভাবত উর্বর। কিন্তু যে জ্ঞান নৈর্ব্যক্তিক, সব মেয়ের তার প্রতি