পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী । ఫిసెసె

  • আচ্ছ তাই ভালো।” * ** i “যে মজুমদারটির কথা বললুম, দলের মধ্যে সে তত বেশি মারাত্মক নয়। তাকে ওরা দলে টেনে রাখে মান বঁাচাবার জন্তে আর-যাদের কথা শুনেছি, চাণক্যের মতে তাদের কাছ থেকে শত হস্ত দূরে থাকলেও ভাবনার কারণ থেকে যায়। অ্যাটর্নি আছে বন্ধুবিহার, তাকে আশ্রয় করা আর অক্টোপসকে জড়িয়ে ধরা একই কথা । ধনী বিধবার তপ্ত রক্ত এই-সব লোক পছন্দ করে। খবরটা শুনে রাখে, যদি কিছু করবার থাকে কোরো। সবশেষে আমার ফিলজফিটা মনে রেখো।”

“দেখুন চৌধুরীমশায়, রেখে দিন ফিলজফি। মানব না আপনার অদৃষ্ট, মানব না আপনার কার্যকারণের অমোঘ বিধান, যদি আমার ল্যাবরেটরির পরে কারও হাত পড়ে। আমি পাঞ্জাবের মেয়ে, আমার হাতে ছুরি খেলে সহজে। আমি খুন করতে পারি তা সে আমার নিজের মেয়ে হোক, আমার জামাইপদের উমেদার হোক।” ওর শাড়ির নীচে ছিল কোমরবন্ধ লুকোনো। তার থেকে ধ। করে এক ছুরি বের করে আলোয় ঝলক খেলিয়ে দিয়ে গেল। বললে, “তিনি আমাকে বেছে নিয়েছিলেন— আমি বাঙালির মেয়ে নই, ভালোবাসা নিয়ে কেবল চোখের জল ফেলে কান্নাকাটি করি নে। ভালোবাসার জন্যে প্রাণ দিতে পারি, প্রাণ নিতে পারি। আমার ল্যাবরেটরি আর আমার বুকের কলিজা, তার মাঝখানে রয়েছে এই ছুরি।” চৌধুরা বললেন, “একসময়ে কবিতা লিখতে পারতুম, আজ আবার মনে হচ্ছে হয়তে পারি লিখতে।” “কবিতা লিখতে হয় লিখবেন, কিন্তু আপনার ফিলজফি ফিরিয়ে নিন। যা না মানবার তাকে আমি শেষ পর্যন্ত মানব না। একলা দাড়িয়ে লড়ব। আর বুক ফুলিয়ে বলব, জিতবই, জিতবই, জিতবই।” * “ব্র্যাভো, আমি ফিরিয়ে নিলুম আমার ফিলজফিট। এখন থেকে লাগবে ঢাকে চাটি তোমার জয়যাত্রার সঙ্গে সঙ্গে। আপাতত কিছুদিনের জন্যে বিদায় নিচ্ছি, ফিরতে দেরি হবে না।” t আশ্চর্যের কথা এই সোহিনীর চোখে জল ভরে এল। বললে, “কিছু মনে করবেন না।” জড়িয়ে ধরলে চৌধুরীর গলা। বললে, “সংসারে কোনো বন্ধনই টেকে না, এও মুহূর্তকালের জন্যে।” । .” বলেই গল ছেড়ে দিয়ে পায়ের কাছে পড়ে সোহিনী অধ্যাপককে প্রণাম করলে।