পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や〉* রবীন্দ্র-রচনাবলী কিছুদিন চাক চালিয়ে শেষকালে বুঝলুম যন্ত্রবিষ্ঠাশিক্ষার আরও গোড়ায় যেতে হবে। শুরুতে দরকার যন্ত্রনির্মাণের মালমসলা যোগাড় করার বিদ্যে। কৃতকর্মাদের জন্তেই ধরণী দুর্গম পাতালপুরীতে জমা করে রেখেছেন কঠিন খনিজ পিও। সেইগুলো । হস্তগত করে তারাই দিগ্বিজয় করেছে যাঁরা বাহাদুর জাত। আর যাদের চিরকালই অন্তভক্ষ্য ধন্থগুৰ্ণ তাদের জন্যেই বাধা বরাদ্দ উপরিস্তরের ফলফসল শাকসবজি ; হাড় বেরিয়ে গেল পাজরের, পেটে পিঠে গেল এক হয়ে । লেগে গেলুম খনিজবিদ্যায়। একথা ভুলি নি যে ফোড বলেছেন ইংরেজ জাত অকেজো । তার প্রমাণ অাছে ভারতবর্ষে । একদিন ওরা হাত লাগিয়েছিল নীলের চাষে, চায়ের চাষে আর-একদিন। সিভিলিয়ানদল দফতরখানায় ‘ল অ্যাও অভর’-এর জাত৷ চালিয়ে দেশের অস্থিমজ্জা ছাতু করে বানিয়ে তুলেছে বস্তাবন্দী ভালোমাহুষি, অতি মোলায়েম। সামান্য কিছু কয়লার আকর ছাড়া ভারতের অন্তর্ভাণ্ডারের সম্পদ উদঘাটিত করতে উপেক্ষা করেছে কিংবা অক্ষমতা দেখিয়েছে। নিংড়েছে বসে বসে পাটের চাষীর রক্ত। জামশেদজি টাটাকে সেলাম করেছি সমুদ্রের ওপার থেকে। ঠিক করেছি আমার কাজ পটকা ছোড়া নয়। সিদ্ধ কাটতে যাব পাতালপুরীর পাষাণপ্রাচীরে। মায়ের আঁচলধরা খোকাদের দলে মিশে ‘ম। মা ধ্বনিতে মস্তর আওড়াব না, আর দেশের যত অভুক্ত অক্ষম রুগ্ন অশিক্ষিত, কাল্পনিক ভয়ে দিনরাত কম্পমান, দরিদ্রকে সহজ ভাষায় দরিদ্র ব’লেই জানব, দরিদ্রনারায়ণ ব’লে একটা বুলি বানিয়ে তাদের বিদ্রুপ করব না। প্রথম বয়সে একবার বচনের পুতুলগড় খেলা অনেক খেলেছি। কবি-কারিগরদের কুমোরটুলিতে স্বদেশের যে সস্তা রাঙতা-লাগানো প্রতিমা গড়া হয় তার সামনে গদগদ ভাষায় অনেক অশ্রজল ফেলেছি। লোকে তার খুব একটা চওড়া নাম দিয়েছিল দেশাত্মবোধ। কিন্তু আর নয়। আক্কেলৰ্দাত উঠেছে। এই জাগ্রত বুদ্ধির দেশে এসে বাস্তবকে বাস্তব বলে জেনেই শুকনে চোখে কোমর বেঁধে কাজ করতে শিখেছি। এবার দেশে ফিরে গিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই বিজ্ঞানী বাঙাল কোদাল নিয়ে কুড়ুল নিয়ে হাতুড়ি নিয়ে দেশের গুপ্তধনের তল্লাসে । মেয়েলিগলার মিহিস্করের মহাকবি-বিশ্বকবিদের অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠ চেলার এই অনুষ্ঠানকে তাদের দেশমাতৃকার পুজা বলে চিনতেই পারবে না। ফেডের কারখানা ছেড়ে তার পর ন’ বছর কাটিয়েছি খনিবিদ্যা খনিজবিদ্যা শিখতে। যুরোপের নানা কর্মশালায় ফিরেছি, হাতে কলমে কাজ করেছি, দুই-একটা যন্ত্রকৌশল নিজেও বানিয়েছি, উৎসাহ পেয়েছি অধ্যাপকের কাছ থেকে,নিজের উপরে বিশ্বাস হয়েছে, ধিক্কার দিয়েছি ভূতপূর্ব মল্লযুদ্ধ অৱতাৰ্থ নিজেকে।