পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী ጐ . هده আমার ছোটোগল্পের সঙ্গে এইসব মোটা মোট কথার বিশেষ যোগ নেই। বাদ দিলে চলত, হয়তো ব! ভালোই হত। কেবল এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলার দরকার ছিল, সেইটে বলি। যৌবনের গোড়ায় যখন নারীপ্রভাবের ম্যাগনেটিজম রঙিন রশ্মির আন্দোলন তোলে জীবনের আকাশে জাকাশে, তখন আমি ছিলুম কোমর বেঁধে অন্যমনস্ক । আমি সন্ন্যাসী, আমি কর্মযোগী, এই সমস্ত বাণীর কুলুপ আমার মনে কষে তাল এটে রেখেছিল। কন্যাদায়িকেরা যখন আশেপাশে ঘোরাঘুরি করেছে তখন আমি স্পষ্ট করেই বলেছি, কন্যার কুষ্টিতে যদি অকালবৈধব্যযোগ থাকে তবেই যেন তারা আমার কথা চিন্তা করেন। * , পাশ্চাত্য মহাদেশে নারীসঙ্গলাভে বাধা দেবার কাটার বেড়া নেই। সেখানে দুর্যোগের আশঙ্কা ছিল। আমি যে স্বপুরুষ, বঙ্গনারীর মুখের ভাষায় তার কোনো ভাষ্য পাই নি। তাই এ সংবাদটা আমার চেতনার বাইরেই ছিল। বিলেতে গিয়ে প্রথম আবিষ্কার করেছি যে সাধারণের চেয়ে আমার বুদ্ধি বেশি, তেমনি ধরা পড়েছে আমার চেহারা ভালো। আমার দেশের অর্ধাশনশীর্ণ পাঠকের মুখে জল আসবার মতে রস গর্ত কাহিনীর সূচনা সেখানে মাঝে মাঝে হয়েছিল। সেয়ানারা অবিশ্বাসে চোখ টেপটিপি করতে পারেন তবু জোর করেই বলব সে কাহিনী মিলনান্ত বা বিয়োগান্তের যবনিকাপতনে পৌছয় নি কেবল আমার জেদবশত। আমার স্বভাবটা কড়া, পাথুরে জমিতে জীবনের সংকল্প ছিল যক্ষের ধনের মতো পোতা, সেখানে চোরের সাবল ঠিকৃরে প’ড়ে ঠন করে ওঠে। তা ছাড়া আমি জাত-পাড়াগেয়ে, সাবেককেলে ভদ্রঘরে আমার জন্ম, মেয়েদের সম্বন্ধে আমার সংকোচ ঘুচতে চায় না। আমার জর্মন ডিগ্রি উচুদরের ছিল। সেটা এখানে সরকারী কাজে বাতিল। তাই সুযোগ করে ছোটোনাগপুরে চন্দ্রবংশীয় এক রাজার দরবারে কাজ নিয়েছি। সৌভাগ্যক্রমে তার ছেলে দেবিকাপ্রসাদ কিছুদিন কেন্থি জে পড়াশুনা করেছিলেন। দৈবাং জুরিকে তার সঙ্গে আমার দেখ। তাকে বুঝিয়েছিলুম আমার প্ল্যান। শুনে উৎসাহিত হয়ে তাদের স্টেটে আমাকে লাগিয়ে দিলেন জিয়লজিকাল সর্ভের কাজে খনি-আবিষ্কারের প্রত্যাশায় । এত বড়ো কাজের ভার আনাড়ি সিভিলিয়নকে না দেওয়াতে সেক্রেটেরিয়টের উপরিস্তরে বায়ুমণ্ডল বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। দেবিকাপ্রসাদ শক্ত ধাতের লোক, বুড়ে রাজার মন টলমল করা সত্বেও টিকে গেলুম। : এখানে আসবার আগে মা বললেন, “ভালো কাজ পেয়েছ, এবার বাবা বিয়ে করে।” আমি বললুম, অর্থাৎ ভালো কাজ মাটি করে। তার পরে বোবা পাথরকে প্রশ্ন করে করে বেড়াচ্ছিলুম পাহাড়ে জঙ্গলে। সে