পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శి• রবীন্দ্র-রচনাবলী مقيمية সময়টাতে পলাশফুলের রাঙা রঙে বনে বনে নেশা লেগে গিয়েছে। শালগাছে অজস্র মঞ্জরী, মৌমাছিদের অনবরত গুঞ্জন । ব্যাবসাদারের মেী সংগ্রহে লেগেছে, কুলের পাতা থেকে জমা করছে তসর রেশমের গুটি, সাওতালরা কুড়চ্ছে পাকা মহুয়া ফল। কিরকিল্প শৰে হালকা নাচের ওড়ন। ঘুরিয়ে চলেছিল একটি ছিপছিপে নদী। শুনেছি এখানকার কোনো অধিবাসিনী তার নাম দিয়েছেন তনিকা। তার কথা পরে হবে । দিনে দিনে বুঝতে পারছি এ জায়গাটা ঝিমিয়ে-পড়া ঝাপসা চেতনার দেশ, এখানে একলা মনের সন্ধান পেলে প্রকৃতি মায়াবিনী তাকে নিয়ে রঙরেজিনীর কাজ করে, যেমন করে সে অস্তস্থধের উত্তরীয়ে । মনটাতে একটু আবেশের ঘোর লাগছিল। ক্ষণে ক্ষণে ঢিলে হয়ে আসছিল কাজের চাল। নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছিলুম, ভিতর থেকে কষে জোর লাগাচ্ছিলুম দাড়ে। ভয় হচ্ছিল ট্রপিকাল মাকড়সার জালে জড়িয়ে পড়ছি বুঝি। শয়তান ট্রপিক্স জন্মকাল থেকে এদেশে হাতপাখার হাওয়ায় ডাইনে বায়ে হারের মন্ত্র চালাচ্ছে আমাদের ললাটে, মনে মনে পণ করছি এর স্বেদসিক্ত জাদু এড়াতেই হবে। বেল পড়ে এল। এক জায়গায় মাঝখানে চর ফেলে মুড়ি পাথর ঠেলে ঠেলে দুই শাখায় ভাগ হয়ে চলে গিয়েছে নদী । সেই বালুর দ্বীপে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে সারি সারি বকের দল। দিনাবসানে তাদের এই ছুটির ছবি দেখে রোজ আমি চলে যাই আমার কাজের বাক ফেরাতে। ঝুলিতে মাটি পাথর অভ্রের টুকরো নিয়ে সেদিন ফিরছিলুম আমার বাংলাঘরে, ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার কাজে। অপরাহ্ল আর সন্ধ্যার মাঝখানে দিনের যে একটা ফালতো পোড়ো সময় থাকে সেইখানটাতে একল৷ মানুষের মন এলিয়ে পড়ে। তাই আমি নিজেকে চেতিয়ে রাখবার জন্যে এই সময়টা লাগিয়েছি পরখ করার কাজে । ডাইনামো দিয়ে বিজলি বাতি জালাই, কেমিক্যাল নিয়ে মাইক্রস্কোপ নিয়ে নিক্তি নিয়ে বসি । এক-একদিন রাত দুপুর পেরিয়ে যায়। আজ একটা পুরোনো পরিত্যক্ত তামার খনির খবর পেয়ে দ্রুত উৎসাহে তারই সন্ধানে চলেছিলুম। কাকগুলো মাথার উপর দিয়ে ঝণকে ঝণকে উড়ে চলেছে ফিকে আলোর আকাশে ক ক শৰে । অদূরে একটা টিবির উপরে তাদের পঞ্চায়েত বসবার হঠাৎ বাধা পড়ল আমার কাজের রাস্তায়। পাচটা গাছের চক্রমণ্ডলী ছিল বনের পর্থেরধারে একটা উচু ভাঙার পরে। সেই বেষ্টনীর মধ্যে কেউ বসে থাকলে কেবল