পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨8 . রবীন্দ্র-রচনাবলী অধ্যাপকের বিস্তামন্দিরে তা নয় তিনি দেহ নিয়ে এসেছেন তার কোলে। এমন বুদ্ধিতে উজ্জল অপরূপ সুন্দর চেহারা কখনও দেখি নি । i “ভবতোষ ঢুকল শয়তান তার স্বৰ্গলোকে স্বল্পজল নদীর মতে বুদ্ধি তার অগভীর ব’লেই জল জল করে আর সেই জন্তেই তার বচনের ধারা অনর্গল । ভুললেন অধ্যাপক, ভুললেন নাতনি। রকমসকম দেখে আমাদের তো হাত নিস্পি করতে থাকত। কিছু বলবার পথ ছিল না— বিবাহের সম্বন্ধ পাকাপাকি, বিলেত গিয়ে সিভিলিয়ান হয়ে আসবে তারই ছিল অপেক্ষ। তারও পাথেয় এবং খরচ জুগিয়েছেন কন্যার পিতা। লোকটার সর্দির ধাত, একান্ত মনে কামনা করেছিলুম হামোনিয়া হবে। হয় নি। পাস করলে পরীক্ষায় ; দেশে ফেরবামাত্রই বিয়ে করলে ইণ্ডিয়। গবর্মেন্টের উচ্চপদস্থ মুরব্বির মেয়েকে। লোকসমাজে নাতনির লজ্জা বাচাবার জন্যে মর্মাহত অধ্যাপক কোথায় অর্ন্তধান করেছেন জানি নে । অনতিকালের মধ্যে ভবতোষের অপ্রত্যাশিত পদোন্নতির সংবাদ এল । মস্ত একটা বিদায়ভোজের আয়োজন হল । শুনেছি খরচটা দিয়েছে ভবতোষ গোপনে নিজের পকেট থেকে। আমরাও নিজের পকেট থেকেই খরচ দিয়ে গুগু লাগিয়ে ভোজটা দিলুম লণ্ডভণ্ড করে । কাগজে কংগ্রেসওয়ালাদের প্রতিই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ভবতোষেরই ইশারায় । আমি জানি এই সৎকার্ষে তারা লিপ্ত ছিল না। যে নাগরা জুতো লেগেছিল পলায়মানের পিঠে, সেটা অধ্যাপকেরই এক প্রাক্তন ছাত্রের প্রশস্ত পায়ের মাপে । পুলিশ এল গোলমালের অনেক পরে— ইনস্পেক্টর আমার বন্ধু, লোকটা সহৃদয় । চিঠিখানা পড়লুম, প্রাক্তন ছাত্রটির প্রতি ঈর্ষা হল । অচিরার সঙ্গে প্রথম কথাটি শুরু করাই সব চেয়ে কঠিন কাজ। আমি বাঙালি মেয়েকে ভয় করি। বোধ করি চেন নেই ব’লেই। অথচ কাজে যোগ দেবার কিছু আগেই কলকাতায় কাটিয়ে এসেছি। সিনেমামঞ্চপথবর্তিনী বাঙালি মেয়ের নতুন চাসকরা ভ্ৰবিলাস দেখে তো স্তম্ভিত হয়েছি— তারা সব জাতবান্ধবী-— থাক তাদের কথা। কিন্তু অচিরাকে দেখলুম একালের ঠেলাঠেলি ভিড়ের বাইরে— নির্মল আত্মমর্যাদায়, স্পৰ্শতীক মেয়ে। আমি তাই ভাবছি প্রথম কথাটি শুরু করব কী করে। . জনরব এই যে কাছাকাছি ডাকাতি হয়ে গেছে। ভাবলুম, হিতৈষী হয়ে বলি ‘রাজা-বাহাদুরকে ব’লে আপনার জন্যে পাহারার বন্দোবস্ত করে দিই। ইংরেজ মেয়ে হলে হয়তে গায়েপড়া আহুকূল্য সইতে পারত না, মাথা বাকিয়ে বলত, সে ভাবন। আমার। এই বাঙালি মেয়ে অচেনার কাছ থেকে কী ভাবে কথাটা নেবে আমার জানা নেই, হয়তো আমাকেই ডাকাত বলে সন্দেহ করবে।