পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আর চলবে না। একটা শেষ নিস্পত্তি করাই চাই। নইলে অপমানের অন্ত থাকবে না। ’ .. ......ཉི ལྷན་》 সাঁওতালী পার্বণ শেষ হয়েছে। সকালে বেড়াতে বেরিয়েছি। অচির সঙ্গে ছিল। উত্তরের দিকে একটা পাহাড় উঠেছে, আকাশের নীলের চেয়ে ঘন নীল। তার গায়ে গায়ে চার শাল আর বৃদ্ধ শাল গাছে বন অন্ধকার। মাঝখান দিয়ে কাঠুরেদের পায়ে-চলার পথ। অধ্যাপক একটা অৰ্কিড ফুল বিশেষ করে পর্যবেক্ষণ করছেন, তার পকেটে সর্বদা থাকে আতস কাচ । গাছগুলোর মধ্যে অন্ধকার যেখানে ভ্ৰকুটিল হয়ে উঠেছে আর ঝিঝি পোক ডাকছে তীব্র আওয়াজে, অচির বসল একটা শেওলাঢাকা পাথরের উপর। পাশে ছিল মোট জাতের বঁাশগাছ, তারই ছাটা কঞ্চির উপর আমি বসলুম। আজ সকাল থেকে অচিরার মুখে বেশি কথা ছিল না। সেইজন্তেই তার সঙ্গে আমার কথা কওয়া বাধা পাচ্ছিল। । 磷 সামনের দিকে তাকিয়ে এক সময় সে আস্তে আস্তে বলে উঠল, “সমস্ত বনটা মিলে প্রকাও একটা বহুঅঙ্গওয়ালা প্রাণী । গুড়ি মেরে বসে আছে শিকারি জন্তুর মতো। যেন স্থলচর অক্টোপাশ, কালো চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার নিরস্তর হিপনটিজমে ক্রমে ক্রমে দিনে দিনে আমার মনের মধ্যে একটা ভয়ের বোঝা যেন নিরেট হয়ে উঠেছে।” 独 আমি বললুম, “কতকটা এইরকম কথাই এই সেদিন আমার ডায়ারিতে লিখেছি।” অচিরা বলে চলল, “মনটা যেন পুরোনো ইমারত, সকল কাজের বার। নিষ্ঠুর অরণ্য যেখানে পেয়েছে তার ফাটল, চালিয়ে দিয়েছে শিকড়, সমস্ত ভিতরটাকে টানছে ভাঙনের দিকে । এই বোবা কালা মহাকায় জন্তু মনের ফাটল আবিষ্কার করতে মজবুত—আমার ভয় বেড়ে চলেছে । দাদু বলেছিলেন, ‘লোকালয় থেকে একান্ত দূরে থাকলে মানুষের মনঃপ্রকৃতি আসে অবশ হয়ে, প্রবল হয়ে ওঠে তার প্রাণপ্রকৃতি। আমি জিগগেস করলুম, এর প্রতিকার কী। তিনি বললেন,মানুষের মনের শক্তিকে আমরা সঙ্গে করে আনতে পারি, এই দেখে-না এনেছি তাকে আমার লাইব্রেরিতে। দাদুর উপযুক্ত এই উত্তর । কিন্তু আপনি কী বলেন।” আমি বললুম, “আমাদের মন খোজে এমন একজন মামুষের সঙ্গ যে আমাদের সমস্ত অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ জাগিয়ে রাখতে পারে, চেতনার বন্ত বইয়ে দেয় জনশূন্ততার মধ্যে। এ তো লাইব্রেরির সাধ্য নয়।”