পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O3 o রবীন্দ্র-রচনাবলী n -* ... “না দিদি, আমাকে ৰাছাই করে নেয় মারা তারাই সাহায্য পায় আমাৰ। এখনকার দিনে কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাত্র সংগ্রহ করে, আগেকার ীিনে সদ্ধান করে শিক্ষক লাভ করত শিক্ষার্থী।” ... •

  • আচ্ছা, সে কথা পরে হবে। এখনকার সিদ্ধান্ত এই যে, তোমাকে তোমার সেই কাজটা ফিরিয়ে নিতে হবে।” 雷、 疊

অধ্যাপক হতবুদ্ধির মতো নাতনির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। অচিরা বললে, “তুমি ভাবছ, আমার গতি কী হবে। আমার গতি তুমি । আর আমাকে ছাড়লে তোমার কী গতি জানই তো। এখন যে তোমার পনেরোই আশ্বিনে পনেরোই অক্টোবরে এক হয়ে যায়, নিজের নূতন ছাতার সঙ্গে পরের পুরোনো ছাতার স্বত্বাধিকারে । ভেদজ্ঞান থাকে না, গাড়ি চড়ে ড্রাইভারকে এমন ঠিকানা বাতলিয়ে দাও সেই ঠিকানায় আজ পর্যন্ত কোনো বাড়ি তৈরি হয় নি, আর চাকরের ঘুম ভাঙবার ভয়ে সাবধানে পা টিপে টিপে কলতলায় নিজে গিয়ে কুঁজোয় জল ভরে নিয়ে আস।” অধ্যাপক আমার দিকে চেয়ে বললেন, “কী তুমি বল, নবীন।” কী জানি ওঁর হয়তো মনে হয়েছিল ওঁদের এই পারিবারিক প্রস্তাবে আমার ভোটেরও একটা মূল্য আছে। আমি খানিক ক্ষণ চুপ করে রইলুম, তার পরে বললুম, “অচিরা দেবীর চেয়ে সত্য পরামর্শ আপনাকে কেউ দিতে পারবে না।” F. অচিরা তখনই উঠে দাড়িয়ে পা ছুঁয়ে আমাকে প্রণাম করলে। বোধ হল যেন চোখ থেকে জল পড়ল আমার পায়ে। আমি সংকুচিত হয়ে পিছু হটে গেলুম। অচিরা বললে, সংকোচ করবেন না। আপনার তুলনায় আমি কিছুই নই সে কথা নিশ্চয় জানবেন। এই কিন্তু শেষ বিদায়, যাবার আগে আর দেখা হবে না।” অধ্যাপক বিস্মিত হয়ে বললেন, “সে কী কথা, দিদি ।” অচিরা বাষ্পগদগদ কণ্ঠ সামলিয়ে হেসে বললে, “দাদু, তুমি অনেক-কিছু জান, কিন্তু আরও-কিছু সম্বন্ধে আমার বুদ্ধি তোমার চেয়ে অনেক বেশি, এ কথাটা মেনে নিয়ে।” এই বলে চলতে উষ্ঠত হল। আবার ফিরে এসে বললে, “আমাকে ভুল বুঝবেন ন— আজ আমার তীব্র আনন্দ হচ্ছে যে আপনাকে মুক্তি দিলুম— তার থেকে আমারও মুক্তি। আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে— লুকোব না, জল আরও পড়বে। নারীর চোখের জল তারই সম্মানে যিনি সব বন্ধন কাটিয়ে জয়যাত্রায় বেরিয়েছেন।” দ্রুতপদে অচিরা চলে গেল ।