পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

eye i রবীন্দ্র-রচনাবলী নাক্ষত্রচক্রবর্তীর সব তারাই, একটি কেন্দ্রের চার দিকে। এই মহলে হুধের ঘূর্ণিপাকের গতিবেগ এক সেকেণ্ডে প্রায় স্থশো মাইল। চলতি চাকার থেকে ছিটকে-পড়া কাদার মতোই সে ঘোরার বেগে নক্ষত্রচক্র থেকে ছিটকে পড়ত ; এই চক্রের হাজার কোটি নক্ষত্র ওকে টেনে রাখছে, সীমার বাইরে যেতে দেয় না। g এই টানের শক্তির খবরটা নিশ্চয়ই পাঠকদের জানা তবু সেটা এই বিশ্ববর্ণনা থেকে বাদ দিলে চলবে না । l ъ “. সত্য হোক মিথ্যে হোক একটা গল্প চলিত আছে যে, বিজ্ঞানীশ্রেষ্ঠ স্থ্যটন একদিন দেখতে পেলেন একটা আপেল ফল গাছ থেকে পড়ল, তখনই তার মনে প্রশ্ন উঠল ফলট নিচেই বা পড়ে কেন, উপরেই বা যায় না কেন উড়ে। র্তার মনে আরও অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল। ভাবছিলেন চাদ কিসের টানে পৃথিবীর চার দিকে ঘুরছে, পৃথিবীই বা কিসের টানে ঘুরছে স্বর্যের চার দিকে। ফল পড়ার ব্যাপারে তিনি বুঝলেন একটা টান দেবার শক্তি আছে এই পৃথিবীর। সব-কিছুকে সে নিজের ভিতরের দিকে টানছে। তাই যদি হবে তবে চন্দ্রকেই বা সে ছাড়বে কেন। নিশ্চয়ই এই শক্তিটা দূরে কাছে এমন জিনিস নেই যাকে টানবে না। ভাবনাটা ক্রমেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারা গেল এক পৃথিবী নয় সব-কিছুই টানে সব-কিছুকে। যার মধ্যে যতটা আছে বস্তু, তার টানবার জোর ততটা। তা ছাড়া দূরত্বের কম-বেশিতে এই টানের জোরও বাড়ে-কমে। দূরত্ব দ্বিগুণ বাড়ে যদি, টান কমে যায় চার গুণ, চার গুণ বাড়লে টান কমবে ষোলো গুণ। এ না হলে স্বর্ষের টানে পৃথিবীর যা-কিছু সম্বল সব লুণ্ঠ হয়ে যেত। এই টানাটানির পালোয়ানিতে কাছের জিনিসের পরে পৃথিবীর জিত রয়ে গেল। হাটনের মৃত্যুর বছর-সত্তর পরে আর-একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী লর্ড ক্যাভেণ্ডিশ তার পরখ করবার ঘরে দুটো সীসের গোল ঝুলিয়ে প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিয়েছেন তার ঠিক নিয়ম মেনেই পরস্পরকে টানছে। এই নিয়মের হিসাবটি বাচিয়ে আমিও এই লেখার টেবিলে বসে সব-কিছুকেই টানছি। পৃথিবীকে, চন্দ্রকে, স্বৰ্ষকে, বিশ্বে যত তারা আছে তার প্রত্যেকটাকেই। যে পি পড়েটা এসেছে আমার ঘরের কোণে আহারের খোজে তাকেও টানছি ; সেও দূর থেকে দিচ্ছে আমায় টান, বলা বাহুল্য আমাকে বিশেষ ব্যস্ত করতে পারেনি। আমার টানে ওরও তেমন ভাবনার কারণ ঘটল না। পৃথিবী এই আঁকড়ে ধরার জোরে অস্থবিধ ঘটিয়েছে অনেক। চলতে গেলে পা তোলার দরকাশ্ন কিন্তু পৃথিবী টানে তাকে নিচের দিকে ; দূরে যেতে ছাপিয়ে পড়ি সমাও লাগে বিস্তর। এই টেনে রাখার ব্যবস্থা গাছপালার পক্ষে খুবই তালে। কিমান্বয়ের পক্ষে একেবারেই নয়। তাই জন্মকাল থেকে মৃত্যুকাল