পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

f বিশ্বপরিচয় * . 8۰۵

এ গ্রহ আছে স্বৰ্ষ থেকে ৮৮ কোটি ৬০ লক্ষ মাইল দূরে। আর ২৯ বছরে এক পাক তার স্বর্যপ্রদক্ষিণ। শনির বেগ বৃহস্পতির চেয়েও কম– এক সেকেণ্ডে ছ’মাইল মাত্র। বৃহস্পতি ছাড়া সৌরজগতের অন্য গ্রহের চেয়ে এর আকার অনেক বড়ে ; এর ব্যাস পৃথিবীর প্রায় ৯ গুণ। পৃথিবীর ব্যাসের চেয়ে নয়গুণ বড়ো হয়েও এক পাক ঘুর খেতে ওর লাগে পৃথিবীর অধেকের চেয়েও কম সময়। এত জোরে ঘুরছে বলে সেই বেগের ঠেলায় ওর আকার হয়েছে কিছু চ্যাপট ধরনের। এত বড়ে এর আয়তন অথচ ওজন পৃথিবীর ৯৫ গুণ মাত্র বেশি। এত হালকা ব’লে এই প্রকাও আয়তন সত্ত্বেও টানবার শক্তি পৃথিবীর চেয়ে এর বেশি নয়। একটি মেঘের আবরণ একে ঘিরে আছে, যার আকার-বদল মাঝে মাঝে দেখা যায়। 1 * শনির উপগ্রহ আছে নয়টি। সব চেয়ে বড়ো যেটি, আয়তনে সে বুধগ্রহের চেয়েও বড়ো, প্রায় আট লক্ষ মাইল দূরে থাকে, ষোলো দিনে তার প্রদক্ষিণ শেষ হয়। শনিগ্রহের বেষ্টনীর বর্ণচ্ছটা-পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই বেষ্টনীর যেসব অংশ গ্রহের কাছাকাছি আছে তাদের চলনবেগ বাইরের দুরবর্তী অংশের চেয়ে অনেক বেশি। বেষ্টনী যদি অখণ্ড চাকার মতে হত, তা হলে ঘূর্ণিচাকার নিয়মে বেগট। বাইরের দিকে বেশি হত। কিন্তু শনির বেষ্টনী যদি খণ্ড খণ্ড জিনিস নিয়ে হয় তা হলে তাদের যে দল গ্রহের কাছে, টানের জোরে তারাই ঘুরবে বেশি বেগে। এইসব লক্ষ লক্ষ টুকরো-উপগ্রহ ছাড়াও ন’টি বড়ো উপগ্রহ ভিন্নপথে শনিগ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে। কী ক’রে যে এ গ্রহের চারি দিকে দলে দলে ছোটো ছোটো টুকরো স্বষ্টি হল, সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের যে মত তারই কিছু এখানে বলা যাক। গ্রহের প্রবল টানে কোনো উপগ্রহই আপন গোল আকার রাখতে পারে না, শেষ পর্যন্ত অনেকটা তার ডিমের মতে চেহারা হয়। অবশেষে এমন এক সময় আসে যখন টান আর সহ করতে না পেরে উপগ্রহ ভেঙে ফুটুকরো হয়ে যায়। এই ছোটো টুকরো দুটিও আবার ভাঙতে থাকে। এমনি করে ভাঙতে ভাঙতে একটিমাত্র উপগ্রহ থেকে লক্ষ লক্ষ টুকরো বেরোনো অসম্ভব হয় না। চাদেরও একদিন এই দশা হবার কথা। বিজ্ঞানীরা বলেন যে, প্রত্যেক গ্রহকে ঘিরে আছে একটি করে অদৃশু মণ্ডলীর বেড়, তাকে বলে বিপদের গণ্ডি । তার মধ্যে এসে পড়লেই উপগ্রহের দেহ ফেঁপে উঠে ডিমের মতে লম্বাটে আকার ধরে, তার পরে থাকে ভাঙতে। শেষকালে টুকরোগুলো জোট বেঁধে ঘুরতে থাকে গ্রহের চার দিকে। বিজ্ঞানীদের মতে বৃহস্পতির প্রথম উপগ্রহ এই অদৃশু বিপদগণ্ডির কাছে এসে পড়েছে, আর-কিছুদিন পরে সেখানে ঢুকলেই খণ্ড খণ্ড হয়ে যাবে। শনিগ্রহের মতে বৃহস্পতির চার দিক ঘিরে তখন তৈরি হবে একটি উজ্জল