পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سواران উপেক্ষা করিতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু স্ত্রীবুদ্ধিকে খাটো করিবার পক্ষে তাহার ভাই ষোগেন্দ্রও যুক্তি আনয়ন করিল। তখন রমেশকে আর ঠেকাইয়া রাখা গেল না। সে উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া স্ত্রীজাতির স্তবগান করিতে আরম্ভ করিল। এইরূপে রমেশ যখন নারীভক্তির উচ্ছসিত উৎসাহে অন্যদিনের চেয়ে দু-পেয়াল চা বেশি খাইয়া ফেলিয়াছে, এমন সময় বেহার তাহার হাতে একটুকরা চিঠি দিল । বহির্ভাগে তাহার পিতার হস্তাক্ষরে তাহার নাম লেখা। চিঠি পড়িয়া তর্কের " মাঝখানে ভঙ্গ দিয়া রমেশ শশব্যস্তে উঠিয়া পড়িল । সকলে জিজ্ঞাসা করিল, “ব্যাপারটা কী ?” রমেশ কহিল, “বাবা দেশ হইতে আসিয়াছেন।” হেমনলিনী যোগেন্দ্রকে কহিল, "দাদা, রমেশবাবুর বাবাকে এইখানেই ডাকিয়া আন-না কেন, এখানে চায়ের সমস্ত প্রস্তুত আছে ।” রমেশ তাড়াতাড়ি কহিল, "না, আজ থাক, আমি যাই ।” অক্ষয় মনে মনে খুশি হইয়া বলিয়া লইল, “এখানে গাইতে র্তাহার হয়তে আপত্তি হইতে পারে।” রমেশের পিতা ব্ৰজমোহনবাবু রমেশকে কহিলেন, “কাল সকালের গাড়িতেই তোমাকে দেশে যাইতে হইবে।” ... • রমেশ মাথা চুলকাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিশেষ কোনো কাজ আছে কি ?” ব্ৰজমোহন কহিলেন, “এমন কিছু গুরুতর নহে ।” তবে এত তাগিদ কেন, সেটুকু শুনিবার জন্য রমেশ পিতার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, সে-কৌতুহল নিবৃত্তি করা তিনি আবশ্বক বোধ করিলেন না। ব্রজমোহনবাবু সন্ধ্যার সময় যখন র্তাহার কলিকাতার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করিতে বাহির হইলেন, তখন রমেশ তাহাকে একটা পত্র লিখিতে বসিল। ‘শ্ৰীচরণকমলেষু’ পর্যন্ত লিখিয়া লেখা আর অগ্রসর হইতে চাহিল না। কিন্তু রমেশ মনে মনে কহিল, “আমি হেমনলিনী সম্বন্ধে যে অমুচ্চারিত সত্যে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছি, বাবার কাছে আর তাহ গোপন করা কোনোমতেই উচিত হইবে না।” অনেকগুলা চিঠি অনেক রকম করিয়া লিখিল— সমস্তই সে ছিড়িয়া ফেলিল । ব্ৰজমোহন আহার করিয়া আরামে নিদ্রা দিলেন। রমেশ বাড়ির ছাদের উপর উঠিয়া প্রতিবেশীর বাড়ির দিকে তাকাইয়া নিশাচরের মতো সবেগে পায়চারি করিতে লাগিল । রাত্রি নয়টার সময় অক্ষয় অন্নদাবাবুর বাড়ি হইতে বাহির হইয়া গেল— রাত্রি সাড়ে নয়টার সময় রাস্তার দিকের দরজা বন্ধ হইল— রাত্রি দশটার সময় অন্নদাবাবুর