পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbro রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার চক্ষু রাখিয়াছিলেন, সে ব্যারিস্টার হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে এবং এক ধনিকন্যার সহিত তাহার বিবাহের আয়োজন চলিতেছে । | ইতিমধ্যে ষে-সমস্ত ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার পরে হেমনলিনীর সহিত পূর্বের ন্যায় সাক্ষাৎ করা তাহার কর্তব্য হইবে কি না, তাহ রমেশ কোনোমতেই স্থির করিতে পারিল না । সম্প্রতি কমলার সহিত তাহার যে-সম্বন্ধ দাড়াইয়াছে, সে-কথা কাহাকেও বলা সে কর্তব্য বোধ করে না । নিরপরাধা কমলাকে সে সংসারের কাছে অপদস্থ করিতে পারে না । অথচ সকল কথা স্পষ্ট না বলিয়া হেমনলিনীর নিকট সে তাহার পূর্বের অধিকার লাভ করিবে কী করিয়া ? কিন্তু অন্নদাবাবুর পত্রের উত্তর দিতে বিলম্ব করা আর তো উচিত হয় না । সে লিখিল, “গুরুতর কারণবশত আপনাদের সহিত সাক্ষাং করিতে অক্ষম হইয়াছি, আমাকে মার্জনা করিবেন।” নিজের নূতন ঠিকানা পত্রে দিল না । এই চিঠিখানি ডাকে ফেলিয়া তাহার পরদিনেই রমেশ শামলা মাথায় দিয়া আলিপুরের আদালতে হাজির দিতে বাহির হইল । এক দিন সে আদালত হইতে ফিরিবার সময় কতক পথ স্থাটিয়া একটি ঠিকাগাড়ির গাড়োয়ানের সঙ্গে ভাড়ার বন্দোবস্ত করিতেছে, এমন সময় একটি পরিচিত ব্যগ্ৰকণ্ঠের স্বরে শুনিতে পাইল, “বাবা, এই যে রমেশবাবু!” “গাড়োয়ান, রোথো, রোখো !” গাড়ি রমেশের পার্থে আসিয়া দাড়াইল । সেদিন আলিপুরের পশুশালায় একটি চড়িভাতির নিমন্ত্রণ সারিয়া অন্নদাবাবু ও র্তাহার কন্যা বাড়ি ফিরিতেছিলেন– এমন সময়ে হঠাৎ এই সাক্ষাং । গাড়িতে হেমনলিনীর সেই স্নিগ্ধগম্ভীর মুখ, তাহার বিশেষ ধরনের সেই শাড়ি পর, তাহার চুল বাধিবার পরিচিত ভঙ্গী, তাহার হাতের সেই প্লেন বালা এবং তারাকাটা দুইগাছি করিয়া সোনার চুড়ি দেখিবামাত্র রমেশের বুকের মধ্যে একটা ঢেউ যেন একেবারে কণ্ঠ পর্যন্ত উচ্ছ্বসিত হইল । অন্নদাবাবু কহিলেন, “এই যে রমেশ, ভাগ্যে পথে দেখা হইল ! আজকাল চিঠিলেথাই বন্ধ করিয়াছ, যদি-বা লেখ, তবু ঠিকানা দাও না। এখন যাইতেছ কোথায় ? বিশেষ কোনো কাজ আছে ?” রমেশ কহিল, "না, আদালত হইতে ফিরিতেছি ।” অন্নদা। তবে চলে, আমাদের ওখানে চা খাইবে চলো । রমেশের হৃদয় ভরিয়া উঠিয়াছিল— সেখানে আর দ্বিধা করিবার স্থান ছিল না।