পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واسbلا বর্ষার যথার্থ সমারোহ– সেখানে শ্রাবণে দু্যলোক-ভূলোকের আনন্দসম্মিলনের , মাঝখানে কোনো বিরোধ নাই । কিন্তু নূতন ভালোবাসায় মানুষকে অরণ্যপর্বতের সঙ্গেই একশ্রেণীভূক্ত করিয়া দেয়। অবিশ্রাম বর্ষায় অন্নদাবাবুর পাকযন্ত্র দ্বিগুণ বিকল হইয়া গেল, কিন্তু রমেশ-হেমনলিনীর চিত্তস্ফূর্তির কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেল না। মেঘের ছায়া, বজের গর্জন, বর্ষণের কলশৰ তাহদের দুই জনের মনকে যেন ঘনিষ্ঠতর করিয়া তুলিল। বৃষ্টির উপলক্ষে রমেশের আদালতষাত্রায় প্রায়ই বিন্ন ঘটিতে লাগিল। এক-এক দিন সকালে এমনি চাপিয়া বৃষ্টি আসে ষে, হেমনলিনী উদ্বিগ্ন হইয়া বলে, “রমেশবাবু, এ বৃষ্টিতে আপনি বাড়ি যাইবেন কী করিয়া ?” রমেশ নিতান্ত লজ্জার খাতিরে বলে, “এইটুকু বই তো নয়, কোনোরকম করিয়া যাইতে পারিব।” হেমনলিনী বলে, “কেন ভিজিয়া সর্দি করিবেন ? এইখানেই খাইয়া যান না।” সর্দির জন্য উৎকণ্ঠ রমেশের কিছুমাত্র ছিল না ; অল্পেই যে তাহার সর্দি হয়, এমন কোনো লক্ষণও তাহার আত্মীয়বন্ধুরা দেখে নাই, কিন্তু বর্ষণের দিনে হেমনলিনীর শুশ্রুষাধীনেই তাহাকে কাটাইতে হইত— দুই পা মাত্র চলিয়াও বাসায় যাওয়া অন্যায় দুঃসাহসিকতা বলিয়া গণ্য হইত। কোনোদিন বাদলার একটু বিশেষ লক্ষণ দেখা দিলেই হেমনলিনীদের ঘরে প্রাতঃকালে রমেশের খিচুড়ি এবং অপরাহ্লে ভাজাভুজি খাইবার নিমন্ত্রণ জুটিত। বেশ দেখা গেল, হঠাৎ সর্দি লাগিবার সম্বন্ধে ইহাদের আশঙ্কা যত অতিরিক্ত প্রবল ছিল, পরিপাকের বিভ্রাট সম্বন্ধে ততটা ছিল না । এমনি দিন কাটিতে লাগিল । এই আত্মবিস্তৃত হৃদয়াবেগের পরিণাম কোথায়, রমেশ স্পষ্ট করিয় ভাবে নাই। কিন্তু অন্নদাবাবু ভাবিতেছিলেন, এবং তাহাদের সমাজের আরও পাচ জন আলোচনা করিতেছিল। একে রমেশের পাণ্ডিত্য যতট, কাণ্ডজ্ঞান ততটা নাই, তাহাতে তাহার বর্তমান মুগ্ধ অবস্থায় তাহার সাংসারিক বুদ্ধি আরও অস্পষ্ট হইয়া গেছে। অন্নদাবাবু প্রত্যহই বিশেষ প্রত্যাশার সহিত তাহার মুখের দিকে চান, কিন্তু কোনো জবাবই পান না। У о অক্ষয়ের গল৷ বিশেষ ভালো ছিল না, কিন্তু সে যখন নিজে বেহালা বাজাইয়া গান গাহিত, তখন অত্যস্ত কড়া সমজদার ছাড়া সাধারণ শ্রোতার দল আপত্তি করিত না, এমনকি, আরও গাহিতে অনুরোধ করিত। অন্নদাবাবুর সংগীতে বিশেষ অনুরক্তি