পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sమ e রবীন্দ্র-রচনাবলী হেমনলিনী বলিত, “হাত বেস্তুরায় পাকিতেছে।” كيه অন্নদা । না না, প্রথমে যেমন শুনিয়াছিলাম, এখন তার চেয়ে অনেকটা অভ্যাস হইয়া আসিয়াছে। আমার তো বোধ হয়, রমেশ যদি লাগিয়া থাকে, তাহা হইলে উহার হাত নিতান্ত মন্দ হইবে না। গানবাজনায় আর কিছু নয়, খুব অভ্যাস করা চাই। একবার সারেগামার বোধটা জন্মিয়া গেলেই তাহার পরে সমস্ত সহজ হইয়া আসে। এ-সকল কথার উপরে প্রতিবাদ চলে না। সকলকে নিরুত্তর হইয়া শুনিতে হয়। >> প্রায় প্রতিবৎসর শরৎকালে পূজার টিকিট বাহির হইলে হেমনলিনীকে লইয় অন্নদাবাবু জব্বলপুরে তাহার ভগিনীপতির কর্মস্থানে বেড়াইতে যাইতেন। পরিপাকশক্তির উন্নতিসাধনের জন্য র্তাহার এই সাংবৎসরিক চেষ্টা । 離 ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি হইয়া আসিল, এবারে পূজার ছুটির আর বড়ো বেশি বিলম্ব নাই। অন্নদাবাবু এখন হইতেই তাহার যাত্রার আয়োজনে ব্যস্ত হইয়াছেন । আসন্ন বিচ্ছেদের সম্ভাবনায় রমেশ আজকাল খুব বেশি করিয়া হারমোনিয়ম শিথিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। এক দিন কথায় কথায় হেমনলিনী কহিল, "রমেশবাবু, আমার বোধ হয়, আপনার অন্তত কিছুদিন বায়ুপরিবর্তন দরকার। না বাবা ?” অন্নদাবাবু ভাবিলেন কথাটা সংগত বটে, কারণ ইতিমধ্যে রমেশের উপর দিয়া শোকদুঃখের দুর্যোগ গিয়াছে। কহিলেন, “অস্তত কিছুদিনের জন্ত কোথাও বেড়াইয়া আসা ভালো। বুঝিয়াছ রমেশ, পশ্চিমই বল আর যে দেশই বল, আমি দেখিয়াছি, কেবল কিছুদিনের জন্য একটু ফল পাওয়া যায়। প্রথম দিনকতক বেশ ক্ষুধা বাড়ে, বেশ খাওয়া যায়, তাহার পরে যে-কে সেই। সেই পেট ভার হইয়া আসে, বুক জাল করিতে থাকে, যা খাওয়া যায়, তা-ই—” হেমনলিনী। রমেশবাবু, আপনি নর্মদা-ঝরনা দেখিয়াছেন ? রমেশ । না, দেখি নাই। হেমনলিনী । এ আপনার দেখা উচিত, না বাবা ? অন্নদা। তা বেশ তো, রমেশ আমাদের সঙ্গেই আস্থন না কেন ? হাওয়া-বদলও হইবে, মাৰ্বলপাহাড়ও দেখিবে।