পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Sఏ(t রমেশের মনোযোগ আকর্ষণপূর্বক সেই বইগুলা তুলিয়া লইয়া ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিল। তখন হঠাৎ রমেশের চেতনা হইল ; সে তাড়াতাড়ি কাছে আসিয়া কহিল, “ওগুলি কোথায় লইয়া যাইতেছেন ? আজ এক বার বইগুলি বাছিয়া লইবেন না ?” হেমনলিনীর ওষ্ঠাধর কঁাপিতেছিল। সে উদ্বেল আশ্রজলের উচ্ছ্বাস বহুকষ্টে সংবরণ করিয়া কম্পিত কণ্ঠে কহিল, “থাক্ না, বই বাছিয়া কী আর হইবে।” এই বলিয়া সে দ্রুতবেগে চলিয়া গেল। উপরের শয়নঘরে গিয়া বইগুলা মেজের উপর ফেলিয়া দিল । রমেশের মনটা আরও বিকল হইয়া গেল। অক্ষয় মনে মনে হাসিয়া কহিল, “রমেশবাবু, আপনার বোধ হয় শরীরটা আজ তেমন ভালো নাই ?” রমেশ ইহার উত্তরে অর্ধস্কুটস্বরে কী বলিল, ভালো বোঝা গেল না। শরীরের কথায় অন্নদাবাবু উৎসাহিত হইয়া কহিলেন, “সে তে রমেশকে দেখিয়াই আমি বলিয়াছি।” অক্ষয় মুখ টিপিয়া হাসিতে হাসিতে কহিল, “শরীরের প্রতি মনোযোগ করা রমেশবাবুর মতো লোকেরা বোধ হয় অত্যন্ত তুচ্ছ মনে করেন। উহারা ভাবরাজ্যের মানুষ— আহার হজম না হইলে তাহা লইয়া চেষ্টাচরিত্র করাটাকে গ্রাম্যতা বলিয়া জ্ঞান করেন ।” অন্নদাবাবু কথাটাকে গম্ভীরভাবে লইয়া বিস্তারিতরূপে প্রমাণ করিতে বসিলেন যে, ভাবুক হইলেও হজম করাটা চাইই । রমেশ নীরবে বসিয়া মনে মনে দগ্ধ হইতে লাগিল । অক্ষয় কহিল, "রমেশবাবু, আমার পরামর্শ শুমুন— অন্নদাবাবুর পিল খাইয়। একটু সকাল-সকাল শুইতে যান।” রমেশ কহিল, "অন্নদাবাবুর সঙ্গে আজ আমার একটু বিশেষ কথা আছে, সেইজন্য আমি অপেক্ষা করিয়া আছি।” অক্ষয় চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল, “এই দেখুন, এ কথা পূর্বে বলিলেই হইত। রমেশবাবু সকল কথা পেটে রাখিয়া দেন, শেষকালে সময় যখন প্রায় উত্তীর্ণ হইয়া যায় তখন ব্যস্ত হইয় উঠেন।” অক্ষয় চলিয়া গেলে রমেশ নিজের জুতাজোড়াটার প্রতি দুই নত চক্ষু বদ্ধ রাখিয়া বলিতে লাগিল, -"অন্নদাবাবু, আপনি আমাকে আত্মীয়ের মতো আপনার ঘরের মধ্যে যাতায়াত করিবার অধিকার দিয়াছেন, ইহা অামি যে কত সৌভাগ্যের