পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী جدہ جد সেলাইয়ের ব্যাপারটি ভাজ করিয়া রুমালে বাধিয়া টেবিলের উপরে রাখিয়া দিয়াছিল। পাশে হারমোনিয়ম-যন্ত্রটি ছিল। আজ খানিকট সংগীত-আলোচনা হইতে পারিবে, এইরূপ তাহার আশা ছিল ; তা ছাড়া, অব্যক্ত সংগীত তো আছেই। রমেশ ঘরে ঢুকিতেই হেমনলিনীর মুখে একটি উজ্জল-কোমল আভা পড়িল । কিন্তু সে-আভ মুহূর্তেই মান হইয়া গেল যখন রমেশ আর-কোনো কথা না বলিয়া প্রথমেই জিজ্ঞাসা করিল, “অন্নদাবাবু কোথায় ?” হেমনলিনী উত্তর করিল, “বাবা র্তাহার বসিবার ঘরে আছেন। কেন ? তাহাকে কি এখনি প্রয়োজন আছে ? তিনি তো সেই চা খাইবার সময় নামিয়া আসিবেন ।” রমেশ । না, আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে। আর বিলম্ব করা উচিত হইবে না। হেমনলিনী । তবে যান, তিনি ঘরেই আছেন । রমেশ চলিয়া গেল । প্রয়োজন আছে ! সংসারে প্রয়োজনেরই কেবল সবুর সয় না! আর ভালোবাসাকেই দ্বারের বাহিরে অবকাশ প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিতে হয় । শরতের এই অম্লান দিন যেন নিশ্বাস ফেলিয়া আপন আনন্দ-ভাণ্ডারের সোনার সিংহদ্বারটি বন্ধ করিয়া দিল। হেমনলিনী হারমোনিয়মের নিকট হইতে চৌকি সরাইয়া লইয়া টেবিলের কাছে বসিয়া একমনে সেলাই করিতে প্রবৃত্ত হইল। ছুচ ফুটিতে লাগিল কেবল বাহিরে নহে, ভিতরেও । রমেশের প্রয়োজনও শীঘ্ৰ শেষ হইল না। প্রয়োজন রাজার মতে আপনার পুরা সময় লয়— আর ভালোবাসা কাঙাল ! S8 রমেশ অন্নদাবাবুর ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তখন অন্নদাবাবু মুখের উপরে খবরের কাগজ চাপ দিয়া কেদারায় পড়িয়া নিদ্রা দিতেছিলেন। রমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া কাসিতেই তিনি চকিত হইয়া উঠিয়া খবরের কাগজটা তুলিয়া ধরিয়াই কহিলেন, “দেখিয়াছ রমেশ, এবারে ওলাউঠায় কত লোক মরিয়াছে ?” রমেশ কহিল, “বিবাহ এখন কিছুদিন বন্ধ রাখিতে হইবে— আমার বিশেষ कांछ व्षां८छ् ।” অন্নদাবাবুর মাথা হইতে শহরের মৃত্যুতালিকার বিবরণ একেবারে লুপ্ত হইয়া