পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী مbه جه লোকের কাছে কোনো কথাই শুনিতে চাই না। যাহা ঘটিয়াছে, তাহাতে আমার মনে কোনো ক্ষোভ নাই।” এই বলিয়া হেমনলিনী দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। অক্ষয় পাংশু মুখে হাসি টানিয়া আনিয়া কহিল, "সংসারে বন্ধুর কাজটাতেই সব চেয়ে লাঞ্ছনা বেশি। সেইজন্যই আমি বন্ধুত্বের গৌরব বেশি অনুভব করি। আপনারা আমাকে ঘৃণা করুন আর গালি দিন, রমেশকে সন্দেহ করাই আমি বন্ধুর কর্তব্য বলিয়৷ জ্ঞান করি। আপনাদের যেখানে কোনো বিপদের সম্ভাবনা দেখি, সেখানে আমি অসংশয়ে থাকিতে পারি না— আমার এই একটা মস্ত দুর্বলতা আছে, এ কথা আমাকে স্বীকার করিতেই হইবে। যাই হোক, যোগেন তো কালই আসিতেছে, সে-ও যদি সমস্ত দেখিয়া-শুনিয়া নিজের বোনের সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত থাকে, তবে এ-বিষয়ে আমি আর কোনো কথা কহিব না।” *. রমেশের ব্যবহার সম্বন্ধে প্রশ্ন করিবার সময় আসিয়াছে, অন্নদাবাবু এ-কথা একেবারে বোঝেন না, তাহা নহে– কিন্তু যাহা অগোচরে আছে, তাহাকে বলপূর্বক । আলোড়িত করিয়া তাহার মধ্য হইতে হঠাৎ একটা ঝঙ্কা আবিষ্কারের সম্ভাবনায় তিনি স্বভাবত তাহাতে কিছুমাত্র আগ্রহবোধ করেন না। অক্ষয়ের উপর তাহার রাগ হইল। তিনি কহিলেন, “অক্ষয়, তোমার স্বভাবটা বড়ো সন্দিগ্ধ। প্রমাণ না পাইয়া কেন তুমি—” অক্ষয় আপনাকে দমন করিতে জানে, কিন্তু উত্তরোত্তর আঘাতে আজ তাহার ধৈর্য ভাঙিয়া গেল। সে উত্তেজিত হইয়া কহিল, “দেখুন অন্নদাবাবু, আমার অনেক দোষ আছে। আমি সংপাত্রের প্রতি ঈর্ষা করি, আমি সাধুলোককে সন্দেহ করি। ভদ্রলোকের মেয়েদের ফিলজফি পড়াইবার মতো বিদ্যা আমার নাই এবং তাহীদের সহিত কাব্য আলোচনা করিবার স্পর্ধাও আমি রাখি না— আমি সাধারণ দশ জনের মধ্যেই গণ্য— কিন্তু চিরদিন আমি আপনাদের প্রতি অনুরক্ত, আপনাদের অনুগত। রমেশবাবুর সঙ্গে আর-কোনো বিষয়ে আমার তুলনা হইতে পারে না— কিন্তু এইটুকুমাত্র অহংকার আমার আছে, আপনাদের কাছে কোনোদিন আমার কিছু লুকাইবার নাই। আপনাদের কাছে আমার সমস্ত দৈন্ত প্রকাশ করিয়া আমি ভিক্ষা চাহিতে পারি, কিন্তু সিদ কাটিয়া চুরি করা আমার স্বভাব নহে। এ কথার কী অর্থ তাহা কালই আপনারা বুঝিতে পারিবেন।”