পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& S • রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশের ক্লান্ত শরীর শীতে শিহরিয়া উঠিল। হঠাৎ একটা আশঙ্কা থাকিয়া থাকিয়া তাহার হৃৎপিণ্ডকে চাপিয়া ধরিতে লাগিল। মনে পড়িয়া গেল, জীবনের রণক্ষেত্রে কাল আবার সংগ্রাম করিতে বাহির হইতে হইবে । ওই আকাশে যদিও চিস্তার রেখা নাই, জ্যোৎস্নার মধ্যে চেষ্টার চাঞ্চল্য নাই, রাত্রি যদিও নিস্তন্ধ শাস্ত, বিশ্বপ্রকৃতি ওই অগণ্য নক্ষত্ৰলোকের চিরকর্মের মধ্যে চিরবিশ্রামে বিলীন— তবু মানুষের আনাগোনা-যোঝাযুঝির অন্ত নাই, সুখে-দুঃখে বাধায়-বিঘ্নে সমস্ত জনসমাজ তরঙ্গিত। এক দিকে অনন্তের ঐ নিত্য শাস্তি, আর-এক দিকে সংসারের এই নিত্য সংগ্ৰাম— দুই একই কালে একসঙ্গে কেমন করিয়া থাকিতে পারে, দুশ্চিস্তার মধ্যেও রমেশের মনে এই প্রশ্নের উদয় হইল। কিছুক্ষণ পূর্বে রমেশ বিশ্বলোকের অন্তঃপুরের মধ্যে প্রেমের যে একটি শাশ্বত সম্পূর্ণ শাস্ত মূর্তি দেখিয়াছিল, সেই প্রেমকেই ক্ষণকাল পরে সংসারের সংঘর্ষে, জীবনের জটিলতায় পদে-পদে ক্ষুব্ধ-ক্ষুন্ন দেখিতে লাগিল । ইহার মধ্যে কোনটা সত্য, কোনটা মায়া ? ১৭ পরদিন সকালের গাড়িতে যোগেন্দ্র পশ্চিম হইতে ফিরিয়া আসিল । আজ শনিবার, কাল রবিবারে হেমনলিনীর বিবাহের কথা । কিন্তু যোগেন্দ্র তাহাদের বাসার দ্বারের কাছে আসিয়া উৎসবের স্বাদগন্ধ কিছুই পাইল না । যোগেন্দ্র মনে করিয়া আসিতেছিল, এতক্ষণে তাহদের বাসার বারান্দার উপর দেবদারুপাতার মালা ঝোলানো শুরু হইয়াছে— কাছে আসিয়া দেখিল, ক্রহীন মালিন্তে পাশের বাড়ির সঙ্গে তাহাদের বাড়ির কোনো প্রভেদ নাই । ভয় হইল, পাছে কাহারও অসুখ-বিসুখ করিয়া থাকে। বাড়িতে প্রবেশ করিয়া দেখিল, চায়ের টেবিলে তাহার জন্য আহারাদি প্রস্তুত রহিয়াছে এবং অন্নদাবাবু অর্ধভূক্ত চায়ের পেয়ালা সম্মুখে রাখিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছেন। যোগেন্দ্র ঘরে ঢুকিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “হেম কেমন আছে ?” च्षम्रा] । उठां८व्णां । যোগেন্দ্র। বিবাহের কী হইল ? অন্নদা। কাল রবিবারের পরের রবিবারে হইবে। যোগেন্দ্র। কেন ? অন্নদা। কেন, তাহা তোমার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করে । রমেশ আমাদের কেবল