পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२$8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদেরই সঙ্গে তাহার বোঝাপড়ার সম্পর্ক বেশি– বিবাহ হইয়া গেলে তখন আমাদের বেশি কথা বলিবার থাকিবে না।” এই বলিয়া যোগেন্দ্র তাড়াতাড়ি চলিয়া গেল। ভালোবাসা যে আড়াল, যে আবরণ খোজে, সে আর রহিল না। হেমনলিনী ও রমেশের যে সম্বন্ধ ক্রমে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হইয়া দুই জনকে কেবল দুই জনেরই করিয়া দিবে, আজ তাহারই উপরে দশ জনের সন্দেহের কঠিন স্পর্শ আসিয়া বারংবার আঘাত করিতেছে। চারি দিকের এই-সকল আন্দোলনের অভিঘাতে হেমনলিনী এমনি ব্যথিত হইয়া আছে যে, আত্মীয়বন্ধুদের সহিত সাক্ষাংমাত্রও তাহাকে কুষ্ঠিত করিয়া তুলিতেছে। ষোগেন্দ্র চলিয়া গেলে হেমনলিনী চৌকিতে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্র বাহিরে যাইতেই অক্ষয় আসিয়া কহিল, “এই-যে, যোগেন আসিয়াছ । সব কথা শুনিয়াছ তো ? এখন তোমার কী মনে হইতেছে ?” যোগেন্দ্র । মনে তো অনেক-রকম হইতেছে, সে-সমস্ত অনুমান লইয়া মিথ্যা বাদামুবাদ করিয়া কী হইবে ? এখন কি চায়ের টেবিলে বসিয়া মনস্তত্ত্বের সূক্ষ্ম আলোচনার সময় ? অক্ষয়। তুমি তো জানই স্বক্ষ আলোচনাটা আমার স্বভাব নয়, তা মনস্তত্বই বল, দর্শনই বল, আর কাব্যই বল। আমি কাজের কথাই বুঝি ভালো— তোমার সঙ্গে সেই কথাই বলিতে আসিয়াছি। i অধীরস্বভাব যোগেন্দ্র কহিল, “আচ্ছা, কাজের কথা হবে। এখন বলিতে পার, রমেশ কোথায় গেছে ?” অক্ষয় কহিল, “পারি।” যোগেন্দ্র প্রশ্ন করিল, “কোথায় ?” অক্ষয় কহিল, “এখন সে আমি তোমাকে বলিব না— আজ তিনটার সময় একেবারে তোমাকে রমেশের সঙ্গে দেখা করাইয়া দিব।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “কাওখান কী বলে দেখি ? তোমরা সবাই যে মূর্তিমান হেঁয়ালি হইয়া উঠিলে। আমি এই ক'দিন মাত্র বেড়াইতে গেছি সেই স্বযোগে পৃথিবীটা এমন ভয়ানক রহস্যময় হইয়া উঠিল! না না অক্ষয়, অমন ঢাকাঢাকি করিলে চলিবে না।” অক্ষয়। শুনিয়া খুশি হইলাম। ঢাকাঢাকি করি নাই বলিয়া আমার পক্ষে একপ্রকার অচল হইয়া উঠিয়াছে— তোমার বোন তো আমার মুখ-দেখা বন্ধ করিয়াছেন, তোমার বাবা,আমাকে সন্দিগ্ধপ্রকৃতি বলিয়া গালি দেন, আর রমেশবাবুও আমার