পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ જ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাকে ছেলেবেলা হইতে জান— কোনো কারণ জিজ্ঞাসা না করিয়া শুদ্ধ আমার কথার উপরে তোমাদিগকে বিশ্বাস রাখিতে হইবে। যোগেন্দ্র। এই মেয়ের নাম কমলা কি না ? রমেশ । হা । যোগেন্দ্র। ইহাকে তোমার স্ত্রী বলিয়া পরিচয় দিয়াছ কি না ? রমেশ । ই, দিয়াছি । যোগেন্দ্র। তবু তোমার উপরে বিশ্বাস রাখিতে হইবে ? তুমি আমাদিগকে জানাইতে চাও, এই মেয়েটি তোমার স্ত্রী নহে ; অন্য সকলকে জানাইয়াছ, এই তোমার স্ত্রী— ইহা ঠিক সত্যপরায়ণতার দৃষ্টান্ত নহে। অক্ষয়। অর্থাং বিদ্যালয়ের নীতিবোধে এ দৃষ্টাস্ত ব্যবহার করা চলে না— কিন্তু ভাই যোগেন, সংসারে দুই পক্ষের কাছে দুইরকম কথা বলা হয়তো অবস্থাবিশেষে আবশুক হইতে পারে। অন্তত তাহার মধ্যে একটা সত্য হওয়াই সম্ভব। হয়তে রমেশবাবু তোমাদিগকে যেটা বলিতেছেন, সেইটেই সত্য । রমেশ । আমি তোমাদিগকে কোনো কথাই বলিতেছি না। আমি কেবল এই কথা বলিতেছি, হেমনলিনীর সহিত বিবাহ আমার কর্তব্যবিরুদ্ধ নহে । কমলা সম্বন্ধে তোমাদের সঙ্গে সকল কথা আলোচনা করিবার গুরুতর বাধা আছে— তোমরা আমাকে সন্দেহ করিলেও সে অন্যায় আমি কিছুতে করিতে পারিব না। আমার নিজের সুখদুঃখ মান-অপমানের বিষয় হইলে আমি তোমাদের কাছে গোপন করিতাম না— কিন্তু অন্যের প্রতি অন্যায় করিতে পারি না । যোগেন্দ্র। হেমনলিনীকে সকল কথা বলিয়াছ ? রমেশ । না। বিবাহের পরে তাহাকে বলিব, এইরূপ কথা আছে— যদি তিনি ইচ্ছা করেন, এখনো তাহাকে বলিতে পারি। যোগেন্দ্র। আচ্ছা, কমলাকে এ সম্বন্ধে দুই-একটা প্রশ্ন করিতে পারি ? রমেশ । না, কোনোমতেই না। আমাকে যদি অপরাধী বলিয়া জ্ঞান কর, তবে আমার সম্বন্ধে যথোচিত বিধান করিতে পার – কিন্তু তোমাদের সম্মুখে প্রশ্নোত্তর করিবার জন্য নির্দোষী কমলাকে দাড় করাইতে পারিব না। যোগেন্দ্র । কাহাকেও প্রশ্নোত্তর করিবার কোনো প্রয়োজন নাই। যাহা জানিবার তাহা জানিয়াছি। প্রমাণ যথেষ্ট হইয়াছে। এখন তোমাকে আমি স্পষ্টই বলিতেছি, ইহার পরে আমাদের বাড়িতে যদি প্রবেশের চেষ্টা কর, তবে তোমাকে অপমানিত হইতে হইবে ।