পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ૨૨ છે রমেশ পাংশুবর্ণমুখে স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “আর একটি কথা আছে, হেমকে তুমি চিঠি লিখিতে পারিবে না - তাহার সঙ্গে প্রকাশ্বে বা গোপনে তোমার স্থদুর সম্পর্কও থাকিবে না। যদি চিঠি লেখ, তবে যে কথা তুমি গোপন রাখিতে চাহিতেছ সেই কথা আমি সমস্ত প্রমাণের সহিত সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করিব। এখন যদি কেহ আমাদের জিজ্ঞাসা করে তোমার সঙ্গে হেমের বিবাহ কেন ভাঙিয়া গেল, আমি বলিব, এ বিবাহে আমার সম্মতি নাই বলিয়া ভাঙিয়া দিয়াছি— ভিতরকার কথাটা বলিব না। কিন্তু তুমি যদি সাবধান না হও, তবে সমস্ত কথা বাহির হইয়া যাইবে । তুমি এমন পাষণ্ডের মতো ব্যবহার করিয়াছ, তবু যে আমি আপনাকে দমন করিয়া রাখিয়াছি সে তোমার উপরে দয়া করিয়া নহে— ইহার মধ্যে আমার বোন হেমের সংস্রব আছে বলিয়াই তুমি এত সহজে নিষ্কৃতি পাইলে । এখন তোমার কাছে আমার এই শেষ বক্তব্য যে, কোনোকালে হেমের সঙ্গে তোমার যে কোনো পরিচয় ছিল, তোমার কথায়-বার্তায় বা ব্যবহারে তাহার যেন কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়। এ সম্বন্ধে তোমাকে সত্য করাইয়া লইতে পারিলাম না, কারণ, এত মিথ্যার পরে সত্য তোমার মুখে মানাইবে না। তবে এখনো যদি লজ্জা থাকে, অপমানের ভয় থাকে, তবে আমার এই কথাটা ভ্ৰমেও অবহেলা করিয়ো না।” অক্ষয় । আহা যোগেন, আর কেন ? রমেশবাবু নিরুত্তর হইয়া আছেন, তৰু তোমার মনে একটু দয়া হইতেছে না ? এইবার চলে। রমেশবাবু, কিছু মনে করিবেন না, আমরা এখন আসি । যোগেন্দ্র-অক্ষয় চলিয়া গেল। রমেশ কাঠের মূতির মতে কঠিন হইয়া বসিয়া রহিল। হতবুদ্ধি-ভাবটা কাটিয়া গেলে তাহার ইচ্ছা করিতে লাগিল, বাসা হইতে বাহির হইয়া গিয়া দ্রুতবেগে পদচারণা করিতে করিতে সমস্ত অবস্থাটা এক বার ভাবিয়া লয়। কিন্তু তাহার মনে পড়িয়া গেল কমলা আছে, তাহাকে বাসায় একলা ফেলিয়া রাখিয়া যাওয়া যায় না। রমেশ পাশের ঘরে গিয়া দেখিল, কমলা রাস্তার দিকের জানালার একটা খড়খড়ি খুলিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। রমেশের পদশৰ শুনিয়া সে খড়খড়ি বদ্ধ করিয়া মুখ ফিরাইল। রমেশ মেজের উপরে বসিল । কমলা জিজ্ঞাসা করিল, “উহারা দুজনে কে ? আজ সকালে আমাদের ইস্কুলে গিয়াছিল।” so রমেশ সবিস্ময়ে কহিল, “ইস্কুলে গিয়াছিল ?”