পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগেন্দ্র কহিল, “একেবারে বন্ধ করিবার দরকার কী— কিছু পরিবর্তন করিয়া কাজ চালাইয়া লওয়া যাইতে পারে।” অন্নদাবাৰু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “ওর মধ্যে পরিবর্তন কোনখানটায় করিবে ?” যোগেন্দ্র। যেখানে পরিবর্তন করা সম্ভব সেইখানেই করিতে হইবে । রমেশের বদলে আর কোনো পাত্র স্থির করিয়া আসছে রবিবারেই যেমন করিয়া হউক কর্ম সম্পন্ন করিতে হইবে । নহিলে লোকের কাছে মুখ দেখাইতে পারিব না। বলিয়া যোগেন্দ্র একবার অক্ষয়ের মুখের দিকে চাহিল। অক্ষয় বিনয়ে মুখ নত করিল। অন্নদাবাবু। পাত্র এত শীঘ্র পাওয়া যাইবে ? যোগেন্দ্র। সে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো । অন্নদাবাৰু। কিন্তু হেমকে তো রাজি করাইতে হইবে। যোগেন্দ্র। রমেশের সমস্ত ব্যাপার শুনিলে সে নিশ্চয় রাজি হইবে । অন্নদাবাৰু। তবে যা তুমি ভালো বিবেচনা হয় তাই করে। কিন্তু রমেশের বেশ সংগতিও ছিল, আবার উপার্জনের মতো বিদ্যাবুদ্ধিও ছিল । এই পরশু আমার সঙ্গে কথা ঠিক হইয়া গেল, সে এটোয়ায় গিয়া প্র্যাক্টস করিবে, এর মধ্যে দেখো দেখি কী কাও ! যোগেন্দ্র। সেজন্য কেন চিন্তা করিতেছ বাবা, এটোয়াতে রমেশ এখনো প্র্যাকটিস করিতে পারিবে। এক বার হেমকে ডাকিয়া আনি, আর তো বেশি সময় নাই । কিছুক্ষণ পরে যোগেন্দ্র হেমনলিনীকে লইয়া ঘরে প্রবেশ করিল। অক্ষয় ঘরের এক কোণে বইয়ের আলমারির আড়ালে বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “হেম, বোসো, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে।” হেমনলিনী স্তব্ধ হইয়া চৌকিতে বসিল । সে জানিত, তাহার একটা পরীক্ষা আসিতেছে। যোগেন্দ্র ভূমিকাচ্ছলে জিজ্ঞাসা করিল, "রমেশের ব্যবহারে সন্দেহের কারণ তুমি কিছুই দেখিতে পাও না ?” হেমনলিনী কোনো কথা না বলিয়া কেবল ঘাড় নাড়িল । যোগেন্দ্র । সে যে বিবাহের দিন এক সপ্তাহ পিছাইয়া দিল, তাহার এমন কী কারণ থাকিতে পারে, যাহা আমাদের কারও কাছে বলা চলে না ! হেমনলিনী চোখ নিচু করিয়া কহিল, “কারণ অবশুই কিছু অাছে।” যোগেন্দ্র। সে তো ঠিক কথা। কারণ তো আছেই, কিন্তু সে কি সন্দেহজনক না? হেমনলিনী আবার নীরবে ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, “না।”