পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢br রবীন্দ্র-রচনাবলী জোটানো যায় না, পয়সা চাই ; সুতরাং কমলার এই অকিঞ্চন ভক্ত-বালকটার পক্ষে পৃথিবী সহজ জায়গা নহে। উমেশ কিছু কাতর হইয়া কহিল, “ম, যদি বাবুকে বলিয়া কোনোমতে গণ্ডাপাচেক পয়সা যোগাড় করিতে পার, তবে একটা বড়ো রুই আনিতে পারি।” কমলা উদবিগ্ন হইয়া কহিল, “না না, তোকে আর স্টীমার হইতে নামিতে দিব না, এবার তুই ডাঙায় পড়িয়া থাকিলে তোকে কেহ আর তুলিয়া লইবে না ” উমেশ কহিল, “ডাঙায় নামিব কেন ? আজ ভোরে খালাসিদের জালে খুব বড়ো মাছ পড়িয়াছে ; এক-আধটা বেচিতেও পারে।” শুনিয়া দ্রুতবেগে কমলা একটা টাকা আনিয়া উমেশের হাতে দিল ; কহিল, “যাহা লাগে দিয়া বাকি ফিরাইয়া আনিস।” উমেশ মাছ আনিল, কিন্তু কিছু ফিরাইয়া আনিল না ; বলিল, “এক টাকার কমে কিছুতেই দিল না ।” কথাটা ষে খাটি সত্য নহে তাহা কমলা বুঝিল ; একটু হাসিয়া কহিল, "এবার স্ট্রীমার থামিলে টাকা ভাঙাইয়। রাখিতে হইবে ।” উমেশ গম্ভীরমুখে কহিল, “সেটা খুব দরকার। আস্ত টাকা এক বার বাহির হইলে ফেরানো শক্ত ।” আহার করিতে প্রবৃত্ত হইয়া রমেশ কহিল, "বড়ো চমৎকার হইয়াছে । কিন্তু এসমস্ত জোটাইলে কোথা হইতে ? এ যে রুইমাছের মুড়ে ” বলিয়া মুড়োটা সযত্নে তুলিয়া ধরিয়া কহিল, “এ তো স্বপ্ন নয়, মায়া নয়, মতিভ্রম নয়— এ যে সত্যই মুড়ো— যাহাকে বলে রোহিত মৎস্ত তাহারই উত্তমাঙ্গ ।” এইরূপে সেদিনকার মধ্যাহ্নভোজন বেশ সমারোহের সহিত সম্পন্ন হইল। রমেশ ডেকে আরাম-কেদারায় গিয়া পরিপাক-ক্রিয়ায় মনোযোগ দিল । কমলা তখন উমেশকে খাওয়াইতে বসিল । মাছের চচ্চড়িট উমেশের এত ভালো লাগিল যে, ভোজনের উৎসাহটা কৌতুকাবহ না হইয়া ক্রমে আশঙ্কাজনক হইয়া উঠিল। উৎকণ্ঠিত কমলা কহিল “উমেশ, আর খাস নে । তোর জন্য চচ্চড়িটা রাথিয় দিলাম, আবার রাত্রে থাইবি ।” এইরূপে দিবসের কর্মে ও হাস্তকৌতুকে প্রাতঃকালের হৃদয়ভারটা কখন ষে দূর হইয়া গেল, তাহা কমলা জানিতে পারিল না। ক্রমে দিন শেষ হইয়া আসিল । স্বর্ষের আলো বাকা হইয়া দীর্ঘতরচ্ছটায় পশ্চিমদিক হইতে জাহাজের ছাদ অধিকার করিয়া লইল । স্পন্দমান জলের উপর বৈকালের