পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ২৬৩ “আমার নাম ত্ৰৈলোক্য চক্রবর্তী। পশ্চিমে সকলেই আমাকে ‘খুড়ো’ বলিয়া জানে। আপনি তো হিষ্ট্রি পড়িয়াছেন ? ভারতবর্ষে ভরত ছিলেন চক্রবর্তী রাজা, আমি তেমনি সমস্ত পশ্চিম-মুল্লুকের চক্রবর্তী-খুড়ে । যখন পশ্চিমে যাইতেছেন তখন আমার পরিচয় আপনার অগোচর থাকিবে না। কিন্তু মহাশয়ের কোথায় যাওয়া হইতেছে ?” রমেশ কহিল, “এখনো ঠিক করিয়া উঠিতে পারি নাই ।” ত্ৰৈলোক্য। আপনার ঠিক করিয়া উঠিতে বিলম্ব হয়, কিন্তু জাহাজে উঠিতে তো দেরি সহে নাই । রমেশ কহিল, “এক দিন গোয়ালন্দে নামিয়া দেখিলাম, জাহাজে বাশি দিয়াছে । তখন এটা বেশ বোঝা গেল, আমার মন স্থির করিতে যদি বা দেরি থাকে কিন্তু জাহাজ ছাড়িতে দেরি নাই । সুতরাং যেটা তাড়াতাড়ির কাজ সেইটেই তাড়াতাড়ি সারিয়া ফেলিলাম।” ত্ৰৈলোক্য । নমস্কার মহাশয় । আপনার প্রতি আমার ভক্তি হইতেছে। আমাদের সঙ্গে আপনার অনেক প্রভেদ । আমরা আগে মতি স্থির করি, তাহার পরে জাহাজে চড়ি– কারণ আমরা অত্যন্ত ভীরুস্বভাব। আপনি যাইবেন এটা স্থির করিয়াছেন, অথচ কোথায় যাইবেন কিছুই স্থির করেন নাই, এ কি কম কথা! পরিবার সঙ্গেই আছেন ? 'ই বলিয়। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে রমেশের মুহুর্তকালের জন্য খটকা বাধিল । তাহাকে নীরব দেখিয়া চক্রবর্তী কহিলেন, “আমাকে মাপ করিবেন— পরিবার সঙ্গে আছেন, সে খবরটা আমি বিশ্বস্তস্থত্রে পূর্বেই জানিয়াছি। বউম। ওই ঘরটাতে রাধিতেছেন, আমিও পেটের দায়ে রান্নাঘরের সন্ধানে সেইখানে গিয়া উপস্থিত। বউমাকে বলিলাম, 'মা, আমাকে দেখিয়া সংকোচ করিয়ো না, আমি পশ্চিম-মুল্লুকের একমাত্র চক্রবর্তী-খুড়ে। আহ, মা যেন সাক্ষাং অন্নপূর্ণ। আমি আবার কছিলাম, 'ম', রান্নাঘরটি যখন দখল করিয়াছ তখন অন্ন হইতে বঞ্চিত করিলে চলিবে না, জামি নিরুপায়। মা একটুখানি মধুর হাসিলেন, বুঝিলাম প্রসন্ন হইয়াছেন, আজ আর আমার ভাবনা নাই। পাজিতে শুভক্ষণ দেখিয়া প্রতিবারই তো বাহির হই, কিন্তু এমন সৌভাগ্য ফি বারে ঘটে না । আপনি কাজে আছেন, আপনাকে আর বিরক্ত করিব না— যদি অহুমতি করেন তো বউমকে একটু সাহায্য কৰি । আমরা উপস্থিত থাকিতে তিনি পদ্মহন্তে বেড়ি ধরিবেন কেন ? না না, আপনি লিখুন, আপনাকে উঠিতে হইবে না— আমি পরিচয় করিয়া লইতে জানি।”