পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই বলিয়া চক্রবর্তী-খুড়া বিদায় হইয়া রান্নাঘরের দিকে গেলেন। গিয়াই কহিলেন, "চমৎকার গন্ধ বাহির হইয়াছে, ঘণ্টট যা হইবে তা মুখে তুলিবার পূর্বেই বুঝা যাইতেছে। কিন্তু অম্বলটা আমি রাধিব মা ; পশ্চিমের গরমে যাহারা বাস না করে অম্বলটা তাহারা ঠিক দরদ দিয়া রাধিতে পারে না । তুমি ভাবিতেছ, বুড়াটা বলে কী— তেঁতুল নাই, অম্বল রাধিব কী দিয়া ? কিন্তু আমি উপস্থিত থাকিতে তেঁতুলের ভাবনা তোমাকে ভাবিতে হইবে না। একটু সবুর করে, আমি সমস্ত যোগাড় করিয়া আনিতেছি।” 劇 বলিয়া চক্রবর্তী কাগজে-মোড় একটা ভীড়ে কামুন্দি আনিয়া উপস্থিত করিলেন । কহিলেন, “আমি অম্বল যা রাধিব তা আজকের মতো খাইয়া বাকিটা তুলিয়। রাখিতে হইবে, মজিতে ঠিক চার দিন লাগিবে। তার পরে একটুখানি মুখে তুলিয়া দিলেই বুঝিতে পারিবে, চক্রবর্তী-খুড়ে দেমাকও করে বটে, কিন্তু অম্বলও রাধে । যাও মা, এবার যাও, মুখ-হাত ধুইয়া লও গে। বেলা অনেক হইয়াছে। রান্না বাকি যা আছে আমি শেষ করিয়া দিতেছি। কিছু সংকোচ করিয়ো না আমার এসমস্ত অভ্যাস আছে মা ; আমার পরিবারের শরীর বরাবর কাহিল, র্তাহারই অরুচি সারাইবার জন্য অম্বল রাধিয়া আমার হাত পাকিয়া গেছে। বুড়ার কথা শুনিয়া হাসিতেছ। কিন্তু ঠাট্টা নয় মা, এ সত্য কথা ।” কমলা হাসিমুখে কহিল, “আমি আপনার কাছ থেকে অম্বল-রাধা শিখিব।” চক্রবর্তী। ওরে বাস রে! বিদ্যা কি এত সহজে দেওয়া যায় ? এক দিনেই শিখাইয়া বিদ্যার গুমর যদি নষ্ট করি তবে বীণাপাণি অপ্রসন্ন হইবেন। দু-চার দিন এ বৃদ্ধকে খোশামোদ করিতে হইবে। আমাকে কী করিয়া খুশি করিতে হয় সে তোমাকে ভাবিয়া বাহির করিতে হইবে না ; আমি নিজে সমস্ত বিস্তারিত বলিয়া দিব। প্রথম দফায়, আমি পানটা কিছু বেশি খাই, কিন্তু সুপারি গোটা-গোট থাকিলে চলিবে না। আমাকে বশীভূত করা সহজ ব্যাপার না ; কিন্তু মার ওই হাসিমুখখানিতে কাজ অনেকটা অগ্রসর হইয়াছে। ওরে, তোর নাম কী রে?” উমেশ উত্তর দিল না । সে রাগিয়াছিল ; তাহার মনে হইতেছিল, কমলার স্নেহ-রাজ্যে বৃদ্ধ তাহার শরিক হইয়া আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। কমলা তাহাকে মৌন দেখিয়া কহিল, “ওর নাম উমেশ ।” 蟾 বুদ্ধ কহিলেন, “এ ছোকরাটি বেশ ভালো। এক দমে ইহার মন পাওয়া যায় না তাহা স্পষ্ট দেখিতেছি, কিন্তু দেখে মা, এর সঙ্গে আমার বনিবে। কিন্তু আর বেলা করিয়ো না, আমার রান্না হইতে কিছুমাত্র বিলম্ব হইবে না।”