পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ২৬৫ কমলা যে একটা শূন্তত অনুভব করিতেছিল এই বৃদ্ধকে পাইয়া তাহা ভুলিয়া গেল । রমেশও এই বৃদ্ধের আগমনে এখনকার মতো কতকটা নিশ্চিন্ত হইল। প্রথম কয় মাস যখন রমেশ কমলাকে আপনার স্ত্রী বলিয়াই জানিত তখন তাহার আচরণ, তখন পরম্পরের বাধাবিহীন নিকটবর্তিত, এখনকার হইতে এতই তফাত যে, এই হঠাৎ প্রভেদ বালিকার মনকে আঘাত না করিয়া থাকিতে পারে না। এমন সময়ে এই চক্রবর্তী আসিয়া রমেশের দিক হইতে কমলার চিন্তাকে যদি খানিকট বিক্ষিপ্ত করিতে পারে তবে রমেশ আপনার হৃদয়ের ক্ষতবেদনায় অখণ্ড মনোযোগ দিয়া বঁাচে । অদূরে তাহার কামরার দ্বারের কাছে আসিয়া কমলা দাড়াইল। তাহার মনের ইচ্ছা, কর্মহীন দীর্ঘমধ্যাহ্নটা সে চক্রবর্তীকে একাকী দখল করিয়া বসে। চক্রবর্তী তাহাকে দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন, “না না মা, এটা ভালো হইল না। এটা কিছুতেই চলিবে না ।” কমলা, কী ভালো হইল না কিছু বুঝিতে না পারিয়া আশ্চর্য ও কুষ্ঠিত হইয়া উঠিল । বৃদ্ধ কহিলেন, “ওই-যে, ওই জুতোটা। রমেশবাবু, এটা আপনা কর্তৃকই হইয়াছে । যা বলেন, এটা আপনার অধৰ্ম করিতেছেন— দেশের মাটিকে এই-সকল চরণস্পর্শ হইতে বঞ্চিত করিবেন না, তাহা হইলে দেশ মাটি হইবে । রামচন্দ্র যদি সীতাকে ডসনের বুট পরাইতেন তবে লক্ষ্মণ কি চোদ্দ বৎসর বনে ফিরিয়া বেড়াইতে পারিতেন মনে করেন ? কখনোই না। আমার কথা শুনিয়া রমেশবাবু হাসিতেছেন, মনে মনে ঠিক পছন্দ করিতেছেন না । না করিবারই কথা। আপনারা জাহাজের বাশি শুনিলেই আর থাকিতে পারেন না, একেবারেই চড়িয়া বসেন, কিন্তু কোথায় ষে যাইতেছেন তাহা একবারও ভাবেন না।” রমেশ কহিল, “খুড়ো, আপনিই নাহয় আমাদের গম্যস্থানটা ঠিক করিয়া দিননা। জাহাজের বঁাশিটার চেয়ে আপনার পরামর্শ পাকা হইবে।” চক্রবর্তী কহিলেন, “এই দেখুন, আপনার বিবেচনাশক্তি এরই মধ্যে উন্নতি লাভ করিয়াছে— অথচ অরক্ষণের পরিচয়। তবে আস্বন, গাজিপুরে আস্বন। স্বাবে মা, গাজিপুরে ? সেখানে গোলাপের খেত আছে, আর সেখানে তোমার এ বৃদ্ধ ভক্তটাও থাকে।” н রমেশও কমলার মুখের দিকে চাহিল। কমলা তৎক্ষণাৎ ঘাড় নাড়িয়া সম্মতি खांबांहेण । " .