পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি ২৭১ অন্ধকারের জাল ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিয়া বাহির হইয়া আসিবার জন্ত আকাশপাতালে এই মাতামাতি, এই রোষগৰ্জিত ক্ৰন্দন। পথহীন প্রান্তরের প্রাস্ত হইতে বাতাস কেবল না না বলিয়া চীৎকার করিতে করিতে নিশীথরাত্রে ছুটিয়া আসিতেছে— একটা কেবল প্রচও অস্বীকার। কিসের অস্বীকার ? তাহ নিশ্চয় বলা যায় না – কিন্তু না, কিছুতেই না, না, না, না । Nව්‍රවේ পরদিন প্রাতে ঝড়ের বেগ কিছু কমিয়াছে, কিন্তু একেবারে থামে নাই। নোঙর তুলিবে কি না এখনো তাহ সারেং ঠিক করিতে পারে নাই, উদবিগ্নমুখে আকাশের দিকে তাকাইতেছে। সকালেই চক্রবর্তী রমেশের সন্ধানে কমলার পাশের কামরায় প্রবেশ করিলেন দেখিলেন, রমেশ তখনো বিছানায় পড়িয়া আছে, চক্রবর্তীকে দেখিয়া সে তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল । এই ঘরে রমেশের শয়নাবস্থা দেখিয়া চক্রবর্তী গতরাত্রির ঘটনার সঙ্গে মনে মনে সমস্তটা মিলাইয়া লইলেন । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাল রাত্রে বুঝি এই ঘরেই শো ওয়া হইয়াছিল ?” রমেশ এই প্রশ্নের উত্তর এড়াইয়া কহিল, “এ কী দুর্যোগ আরম্ভ হইয়াছে ! কাল রাত্রে খুড়োর ঘুম কেমন হইল ?” চক্রবর্তী কহিলেন, “আমাকে নির্বোধের মতো দেখিতে, আমার কথাবার্তাও সেই প্রকারের, তবু এই বয়সে আমাকে অনেক দুরূহ বিষয়ের চিন্তা করিতে হইয়াছে এবং তাহার অনেকগুলার মীমাংসাও পাইয়াছি— কিন্তু আপনাকে সব চেয়ে দুরূহ বলিয়া ঠেকিতেছে।” মুহূর্তের জন্য রমেশের মুখ ঈষৎ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল, পরক্ষণেই আত্মসংবরণ করিয়া একটুখানি হাসিয়া কহিল, "দুরূহ হওয়াটাই যে সব সময়ে অপরাধের তা নয় খুড়ে । তেলেগু ভাষার শিশুপাঠও দুরূহ, কিন্তু ত্রৈলজের বালকের কাছে তাহা জলের মতো সহজ । যাহাকে না বুঝিবেন তাহাকে তাড়াতাড়ি দোষ দিবেন না এবং ষে অক্ষর না বোঝেন কেবলমাত্র তাহার উপরে অনিমেষ চক্ষু রাখিলেই যে তাহ কোনোকালে বুঝিতে পারিবেন এমন আশা করিবেন না।” বৃদ্ধ কহিলেন, “আমাকে মাপ করিবেন রমেশবাৰু। আমার সঙ্গে যাহার বোঝাপড়ার কোনো সম্পর্ক নাই তাহাকে বুঝিতে চেষ্টা করাই খৃষ্টতা। কিন্তু পৃথিবীতে দৈবাৎ এমন এক-একটি মাহব মেলে, দৃষ্টিপাতমাত্রই বাহার সঙ্গে সম্বন্ধ