পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী স্থির হইয়া যায়। তার সাক্ষী, আপনি ঐ দেড়ে সারেঙটাকে জিজ্ঞাসা করুন— বউমার সঙ্গে ওর আত্মীয়সম্বন্ধ ওকে এখনি স্বীকার করিতে হইবে ; ওর ঘাড় করিবে ; না করে তো ওকে আমি মুসলমান বলিব না। এমন অবস্থায় হঠাৎ মাঝখানে তেলেগু ভাষা আসিয়া পড়িলে ভারি মুশকিলে পড়িতে হয়। শুধু শুধু রাগ করিলে চলিবে না রমেশবাবু, কথাটা ভাবিয়া দেখিবেন।” রমেশ কহিল, “ভাবিয়া দেখিতেছি বলিয়াই তো রাগ করিতে পারিতেছি না ; কিন্তু আমি রাগ করি আর না করি, আপনি দুঃখ পান আর না পান, তেলেগু ভাষা তেলেগুই থাকিয়া যাইবে— প্রকৃতির এইরূপ নিষ্ঠুর নিয়ম।” এই বলিয়া রমেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল । ইতিমধ্যে রমেশ চিন্তা করিতে লাগিল, গাজিপুরে যাওয়া উচিত কি না। প্রথমে সে ভাবিয়াছিল, অপরিচিত স্থানে বাসস্থাপন করার পক্ষে বুদ্ধের সহিত পরিচয় তাহার কাজে লাগিবে। কিন্তু এখন মনে হইল, পরিচয়ের অসুবিধাও আছে। কমলার সহিত তাহার সম্বন্ধ আলোচনা ও অনুসন্ধানের বিষয় হইয়া উঠিলে এক দিন তাহ কমলার পক্ষে নিদারুণ হইয়া দাড়াইবে । তার চেয়ে যেখানে সকলেই অপরিচিত, যেখানে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার কেহ নাই, সেইখানে আশ্রয় লওয়াই ভালো । গাজিপুরে পৌছিবার আগের দিনে রমেশ চক্রবর্তীকে কহিল, “খুড়ে, গাজিপুর আমার প্র্যাকটিসের পক্ষে অন্তকূল বলিয়া বুঝিতেছি না, আপাতত কাশীতে যাওয়াই আমি স্থির করিয়াছি।” রমেশের কথার মধ্যে নিঃসংশয়ের স্বর শুনিয়া বুদ্ধ হাসিয়া কহিলেন, “বার বার ভিন্ন ভিন্ন রকম স্থির করাকে স্থির করা বলে না— সে তো অস্থির করা। যা হউক, এই কাশী যাওয়াটা এখনকার মতো আপনার শেষ স্থির ?” রমেশ সংক্ষেপে কহিল, “ই ।” বুদ্ধ কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেলেন এবং জিনিসপত্র বঁাধিতে প্রবৃত্ত হইলেন । কমলা আসিয়া কহিল, “খুড়োমশায়, আজ কি আমার সঙ্গে আড়ি ?” বৃদ্ধ কহিলেন, “ঝগড়া তো দুই বেলাই হয়, কিন্তু এক দিনও তো জিতিতে পারিলাম না ।” কমলা। আজ যে সকাল হইতে তুমি পালাইয়া বেড়াইতেছ ? চক্রবর্তী। তোমরা যে মা আমার চেয়ে বড়ো রকমের পলায়নের চেষ্টায় আছ, আর আমাকে পলাতক বলিয়া অপবাদ দিতেছ ?