পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

는 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনো সংকোচ করা অন্যায়। যমরাজ সেদিন কমলাকে বধুরূপে আমার পার্থে আনিয়া দিয়া সেই নির্জন সৈকতদ্বীপে স্বয়ং গ্রন্থিবন্ধন করিয়া দিয়াছেন– তাহার মতো এমন পুরোহিত জগতে কোথায় আছে!’ হেমনলিনী এবং রমেশের মাঝখানে একটা যুদ্ধক্ষেত্র পড়িয়া আছে । বাধাঅপমান-অবিশ্বাস কাটিয়া যদি রমেশ জয়ী হইতে পারে তবেই সে মাথা তুলিয়া হেমনলিনীর পার্শ্বে গিয়া দাড়াইতে পারিবে । সেই যুদ্ধের কথা মনে হইলে তাহার ভয় হয় ; জিতিবার কোনো আশা থাকে না । কেমন করিয়া প্রমাণ করিবে ? এবং প্রমাণ করিতে হইলে সমস্ত ব্যাপারটা লোকসাধারণের কাছে এমন কদর্য এবং কমলার পক্ষে এমন সাংঘাতিক আঘাতকর হইয়া উঠিবে যে, সে সংকল্প মনে স্থান দেওয়া কঠিন। অতএব দুর্বলের মতো আর দ্বিধা না করিয়া কমলাকে স্ত্রী বলিয়া গ্রহণ করিলেই সকল দিকে শ্রেয় হইবে। হেমনলিনী তে রমেশকে ঘৃণা করিতেছে— এই ঘৃণাই তাহাকে উপযুক্ত সংপাত্রে চিত্তসমর্পণ করিতে আহুকূল্য করিবে। এই ভাবিয়া রমেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাসের দ্বারা সেইদিককার আশাটাকে ভূমিসাৎ করিয়া দিল । צסא রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “কী রে, তুই কোথায় চলিয়াছিস্ ?” উমেশ কহিল, “আমি মাঠাকরুনের সঙ্গে যাইতেছি।” রমেশ । আমি যে তোর কাশী পর্যন্ত টিকিট করিয়া দিয়াছি। এ-যে গাজিপুরের ঘাট । আমরা তো কাশী যাইব না । উমেশ । আমিও যাইব না । উমেশ যে তাহদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্যে পড়িবে এরূপ আশঙ্কা রমেশের মনে ছিল না ; কিন্তু ছোড়াটার অবিচলিত দৃঢ়তা দেখিয়া রমেশ স্তম্ভিত হইল। কমলাকে জিজ্ঞাসা করিল, “কমলা, উমেশকেও লইতে হইবে নাকি ?” কমলা কহিল, “না লইলে ও কোথায় যাইবে }” রমেশ । কেন, কাশীতে ওর আত্মীয় আছে। কমলা। না, ও আমাদেরই সঙ্গে যাইবে বলিয়াছে। উমেশ, দেখিস, তুই খুড়োমশায়ের সঙ্গে সঙ্গে থাকিস, নহিলে বিদেশে ভিড়ের মধ্যে কোথায় হারাইয় যাইবি ।