পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৬ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী চক্রবর্তী। সে অনেক কথা। আপাতত ঘরে অতিথি উপস্থিত, সেবার আয়োজন করিতে হইবে । এই বলিয়া চক্রবর্তী অভ্যাগতদের পরিচয় দিলেন। চক্রবর্তীর ঘরে হঠাৎ এরূপ বিদেশী অতিথির সমাগম প্রায়ই ঘটিয়া থাকে, কিন্তু সস্ত্রীক অতিথির জন্য হনুজ্ঞানীি প্রভত ছিলেন না ; তিনি কহিলেন, “ওমা, তোমার এখানে ঘর কোথায় ?” চক্রবর্তী কহিলেন, “আগে তো পরিচয় হউক, তার পরে ঘরের কথা পরে হইবে। আমাদের শৈল কোথায় ?” হরিভাবিনী । সে তাহার ছেলেকে স্নান করাইতেছে। চক্রবর্তী তাড়াতাড়ি কমলাকে অন্তঃপুরে ডাকিয়া আনিলেন । কমলা হরিভাবিনীকে প্রণাম করিয়া দাড়াইতেই তিনি দক্ষিণ করপুটে কমলার চিবুক স্পর্শ করিয়া নিজের অঙ্গুলি চুম্বন করিলেন এবং স্বামীকে কহিলেন “দেখিয়াছ, মুখখানি অনেকটা আমাদের বিধুর মতো।” বিধু ইহাদের বড়ো মেয়ে, কানপুরে স্বামিপৃহে থাকে। চক্রবর্তী মনে মনে হাসিলেন। তিনি জানিতেন কমলার সহিত বিধুর কোনো সাদৃশু নাই, কিন্তু হরিভাবিনী রূপগুণে বাহিরের মেয়ের জয় স্বীকার করিতে পারেন না। শৈলজা তাহার ঘরেই থাকে, পাছে তাহার সহিত প্রত্যক্ষ তুলনায় বিচারে হার হয়, এইজন্য অনুপস্থিতকে উপমাস্থলে রাখিয়া জয়পতাকা গৃহিণী আপন গৃহের মধ্যেই অচল করিলেন। হরিভাবিনী। ইহারা আসিয়াছেন, তা বেশ হইয়াছে, কিন্তু আমাদের নতুন বাড়ির তো মেরামত শেষ হয় নাই— এখানে আমরা কোনোমতে মাথা গুজিয়া আছি— ইহাদের যে কষ্ট হইবে। বাজারে চক্রবর্তীর একটা ছোটো বাড়ি মেরামত হইতেছে বটে, কিন্তু সেটা একটা দোকান ; সেখানে বাস করিবার কোনো স্থবিধাও নাই, সংকল্পও নাই । চক্রবর্তী এই মিথ্যার কোনো প্রতিবাদ না করিয়া একটু হাসিয়া বলিলেন, “ম যদি কষ্টকে কষ্ট জ্ঞান করিবেন তবে কি উহাকে এ ঘরে আনি ? ( স্ত্রীর প্রতি ) যাই হউক, তুমি আর বাহিরে দাড়াইয়ো না - শরৎকালের রৌদ্রটা বড়ো খারাপ।” এই বলিয়া চক্রবর্তী রমেশের নিকট বাহিরে চলিয়া গেলেন। হরিভাবিনী কমলার বিস্তারিত পরিচয় লইতে লাগিলেন । “তোমার স্বামী বুঝি উকিল ? তিনি কতদিন কাজ করিতেছেন ? তিনি কত রোজগার করেন ? এখনো বুঝি ব্যাবসা আরম্ভ করেন নাই ? তবে চলে কী করিয়া ? তোমার শ্বশুরের বুঝি সম্পত্তি আছে ? জান না ? ওমা, কেমন মেয়ে গো ! শ্বশুরবাড়ির