পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি २११ খবর রাখ না ? সংসার-খরচের জন্য স্বামী তোমাকে মাসে কত করিয়া দেন ? শাশুড়ি যখন নাই তখন তো সংসারের ভার নিজের হাতেই লইতে হইবে । তুমি তো নেহাত কচি মেয়েটি নও— আমার বড়ো জামাই যা-কিছু রোজগার করে সমস্তই বিধুর হাতে গনিয়া দেয়’ ইত্যাদি প্রশ্ন ও মন্তব্যের দ্বারা অতি অল্পকালের মধ্যেই কমলাকে অর্বাচীন প্রতিপন্ন করিয়া দিলেন । কমলাও যে রমেশের অবস্থা ও ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে কত অল্প জানে এবং তাহাদের সম্বন্ধ বিচার করিলে এই অল্পজ্ঞান যে কত অসংগত ও লোকসমাজে লজ্জাকর, হরিভাবিনীর প্রশ্নমালায় তাহা তাহার মনে স্পষ্ট উদয় হইল । সে ভাবিয়া দেখিল, আজ পর্যস্ত রমেশের সঙ্গে ভালো করিয়া কোনো কথা আলোচনা করিবার অবকাশমাত্র সে পায় নাই— সে রমেশের স্ত্রী হইয়া রমেশের সম্বন্ধে কিছুই জানে না। আজ ইহা তাহার নিজের কাছে অদ্ভুত বোধ হইল এবং নিজের এই অকিঞ্চিৎকরত্বের লজ্জ তাহাকে পীড়িত করিয়া তুলিল । হরিভাবিনী আবার শুরু করিলেন, “বউমা, দেখি তোমার বালা । এ সোনা তো তেমন ভালো নয়। বাপের বাড়ি হইতে কিছু গহনা আন নাই ? বাপ নাই ? তাই বলিয়া কি এমন করিয়া গা খালি রাখে ? তোমার স্বামী বুঝি কিছু দেন নাই ? আমার বড়ো জামাই দুই মাস অস্তর আমার বিধুকে একখানা করিয়া গহনা গড়াইয়া দেয় ।” এই-সমস্ত সওয়াল-জবাবের মধ্যে শৈলজা তাহার দুই বৎসর বয়সের কস্তার হাত ধরিয়া আসিয়া উপস্থিত হইল। শৈলজা খামবৰ্ণ, তাহার মুখখানি ছোটোখাটো, মুষ্টিমেয়, চোখ-দুটি উজ্জল, ললাট প্রশস্ত— মুখ দেখিলেই স্থির বুদ্ধি এবং একটি শাস্ত পরিতৃপ্তির ভাব চোখে পড়ে। শৈলজার ছোটো মেয়েটি কমলার সম্মুখে দাড়াইয়। মুহূর্তকাল পর্যবেক্ষণের পর বলিয়া উঠিল মাসি’– বিধুর সঙ্গে সাদৃশ্ব বিচার করিয়া ষে বলিল— তাহা নহে, একটা বিশেষ বয়সের যে-কোনো মেয়েকে তাহার অপ্রিয় বোধ না হইলেই তাহাকেই সে নির্বিচারে মাসি নামে অভিহিত করে । কমলা তৎক্ষণাৎ তাহাকে কোলে তুলিয়া लझेल । হরিভাবিনী শৈলজার নিকট কমলার পরিচয় দিয়া কহিলেন, "ইহার স্বামী উকিল, নূতন রোজগার করিতে বাহির হইয়াছেন। পথে কর্তার সঙ্গে দেখা হইয়াছিল, ইহাদের গাজিপুরে জানিয়াছেন।” ما يلي শৈলজ। কমলার মুখের দিকে চাহিল, কমলাও শৈলজার মুখের দিকে চাহিল, এবং সেই দৃষ্টিপাতেই এক মুহূর্তে উভয়ের সখ্যবন্ধন বাধিয়া গেল। হরিভাবিনী t|32 է: