পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سqb & আতিথ্যের আয়োজনে চলিয়া গেলেন ; শৈলজা কমলার হাত ধরিয়া কহিল, “এসো ভাই, আমার ঘরে এসো।” |ங் অল্পক্ষণের মধ্যেই দুজনে ঘনিষ্ঠভাবে কথা আরম্ভ হইল। শৈলজার সঙ্গে কমলার বয়সের যে প্রভেদ ছিল তাহ চোখে দেখিয়া সহসা বোঝা যায় না। শৈলজার সবস্থদ্ধ একটু ছোটােখাটাে সংক্ষিপ্ত রকমের ভাব, কমলার ঠিক তাহার উলটা— আয়তনে ও ভাবে ভঙ্গীতে সে আপনার বয়সকে অনেকটা ছাড়াইয়া গেছে। বিবাহের পর হইতে তাহার মাথার উপরে শ্বশুরবাড়ির কোনো রকমের চাপ না থাকাতেই হউক বা যে কারণেই হউক, দেখিতে দেখিতে সে অসংকোচে বাড়িয়া উঠিয়াছিল। তাহার মুখের ভাবের মধ্যে একটা স্বাধীনতার তেজ ছিল। তাহার সম্মুখে যাহা-কিছু উপস্থিত হয়, তাহাকে অন্তত মনে মনেও সে প্রশ্ন না করিয়া ক্ষান্ত হয় না। চুপ করো যাহা বলি তাহাই করিয়া যাও বিউমানুষের অত নেই করা শোভা পায় না”— এ-সব কথা তাহাকে আজ পর্যন্ত শুনিতে হয় নাই। তাই সে যেন মাথা তুলিয়া সোজা হইয়। উঠিয়াছে, তাহার সরলতার মধ্যে সবলতা আছে। ■ শৈলজার মেয়ে উমি উভয়ের মনোযোগ নিজের প্রতি সম্পূর্ণ একচেটে করিয়া লইবার বিধিমত চেষ্টা করিলেও দুই নূতন সখীর মধ্যে কথাবার্তা জমিয়া উঠিল । এই কথোপকথন-ব্যাপারে কমলা নিজের তরফের দৈন্য সহজেই বুঝিতে পারিল। শৈলজার বলিবার ঢের কথা আছে, কিন্তু কমলার বলিবার কিছুই নাই । কমলার জীবনের চিত্রপটে তাহার দাম্পত্যের যে একটা ছবি উঠিয়াছে তাহা একটি পেনসিলের ক্ষীণ রেখা মাত্র ; তাহার সকল জায়গা পরিস্ফুট সুসংলগ্ন নহে, তাহাতে আজও একটুও রঙ ফলানো হয় নাই। কমলা এতদিন এই শূন্তত স্পষ্ট করিয়া বুঝিবার অবকাশ পায় নাই ; হৃদয়ের মধ্যে অভাব অনুভব করিয়াছে, মাঝে মাঝে বিদ্রোহ-ভাবও উপস্থিত হইয়াছে, কিন্তু ইহার চেহারাটা তাহার চোখে ফুটিয়া ওঠে নাই। বন্ধুত্বের প্রথম আরম্ভেই শৈলজা যখন তাহার স্বামীর কথা বলিতে আরম্ভ করিল— যে স্বরে শৈলজার হৃদয়ের সব তারগুলি বাধা রহিয়াছে, জাঙল পড়িবামাত্র যখন সেই স্বর বাজিয়া উঠিল, তখন কমলা দেখিল, কমলার হৃদয় হইতে এ স্বরের কোনো ঝংকার দিবার নাই ; স্বামীর কথা সে কী বলিবে, বলিবার বিষয়ই বা কী আছে। বলিবার আগ্রহই বা কোথায় ! মুখের বোঝাই লইয়া শৈলজার ইতিহাস যেথা হু হু করিয়া স্রোতে ভাসিয়া চলিয়াছে কমলার শূন্ত নৌকাটা সেখানে মাটিতে ঠেকিয়া অচল হইয়া আছে। শৈলজার স্বামী বিপিন গাজিপুরে অহিফেন-বিভাগে কাজ করে। চক্রবর্তীর