পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি भ्रां Sbrー রুচিকর নহে, তথাপি ছুটির দিনে এই অনুরোধ লঙ্ঘন করিতে সে সাহস করিল না। রমেশ তখন বাহিরের ঘরের জাজিম-পাত মেজের উপর চিত হইয়া শুইয়া এক পায়ের উচ্ছি ত হাটুর উপরে আর-এক পা তুলিয়া দিয়া পায়োনিয়র পড়িতেছিল। পাঠ্য অংশ শেষ করিয়া যখন কাজের অভাবে তাহার বিজ্ঞাপনের প্রতি মনোযোগ দিবার উপক্রম করিতেছে, এমন-সময় বিপিনকে ঘরে আসিতে দেখিয়া সে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। সঙ্গী হিসাবে বিপিন ষে খুব প্রথমশ্রেণীর পদার্থ তাহা না হইলেও বিদেশে মধ্যtহ্নযাপনের পক্ষে রমেশ তাহাকে পরম লাভ বলিয়া গণ্য করিল এবং বলিয়া উঠিল, “আম্বন বিপিনবাবু, আস্থন, বস্থন ।” বিপিন না বসিয়াই একটুখানি মাথা চুলকাইয়া বলিল, “আপনাকে এক বার ইনি ভিতরে ডাকিতেছেন।” রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “কে, কমলা ?” বিপিন কহিল, “হঁ।” রমেশ কিছু আশ্চর্ষ হইল। রমেশ পূর্বেই স্থির করিয়াছে কমলাকে সে স্ত্রী বলিয়াই গ্রহণ করিবে, কিন্তু তাহার স্বাভাবিক-দ্বিধা-গ্রস্ত মন তৎপূর্বে এই কয়দিন অবকাশ পাইয়া বিশ্রাম করিতেছে। কল্পনায় কমলাকে গৃহিণীপদে অভিষিক্ত করিয়া সে মনকে নানাপ্রকার ভাবী স্থখের আশ্বাসে উত্তেজিত করিয়াও তুলিয়াছে, কিন্তু প্রথম আরম্ভটাই দুরূহ। কিছুদিন হইতে কমলার প্রতি যেটুকু দূরত্ব রক্ষা করা তাহার অভ্যস্ত হইয়া গেছে হঠাৎ এক দিন কেমন করিয়া সেটা ভাঙিয়া ফেলিবে, তাহা সে ভাবিয়া পাইতেছিল না ; এইজন্যই বাড়িভাড়া করিবার দিকে তাহার তেমন সত্বরতা ছিল না । কমলা ডাকিয়াছে শুনিয়া রমেশের মনে হইল, নিশ্চয় বিশেষ কোনো একটা প্রয়োজন পড়িয়াছে। তবু প্রয়োজনের ডাক হইলেও তাহার মনের মধ্যে একটা হিল্লোল উঠিল । বিপিনের অনুবতী হইয়া ‘পায়োনিয়রটা ফেলিয়া রাখিয়া যখন সে অস্তঃপুরে যাত্রা করিল তখন এই মধুকরগুঞ্জরিত কার্তিকের আলস্তদীর্ঘ জনহীন মধ্যাহ্নে একটা অভিসারের আভাস তাহার চিত্তকে একটুখানি চঞ্চল করিল। বিপিন কিছুদূর হইতে ঘর দেখাইয়া দিয়া চলিয়া গেল- কমলা মনে করিয়াছিল, শৈলজা তাহার সম্বন্ধে হাল ছাড়িয়া দিয়া বিপিনের কাছে চলিয়া গেছে। তাই সে খোলা দরজার চৌকাঠের উপর বসিয়া সামনের বাগানের দিকে চাহিয়া ছিল। শৈল কেমন করিয়া কমলার অস্তরে-বাহিরে একটা ভালোবাসার সুর বঁাধিয়া দিয়াছিল।