পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

さbrbr রবীন্দ্র-রচনাবলী রমেশ । নলিনবাবুটি কে ? বেহারা। তাহা তো বলিতে পারি না। রমেশ প্রশ্ন করিয়া করিয়৷ জানিল, নলিনবাৰু যুবাপুরুষ, কিছুকাল হইতে এই বাড়িতে যাতায়াত করিতেছেন। যদিও রমেশ হেমনলিনীর আশা ত্যাগ করিয়াই যাইতেছিল, তথাপি নলিনবাবুটির প্রতি তাহার সম্ভাব আকৃষ্ট হইল না। রমেশ । তোর দিদিঠাকরুনের শরীর কেমন আছে ? বেহার কহিল, “ৰ্তাহার শরীর তো ভালোই আছে।” স্থখন-বেহারাটা ভাবিয়াছিল, এই স্বসংবাদে রমেশবাবু নিশ্চিন্ত ও স্বধী হইবেন। অন্তর্যামী জানেন, স্থখন-বেহারা ভুল বুঝিয়াছিল। রমেশ কহিল, “আমি একবার উপরের ঘরে যাইব ।” বেহার তাহার ধূমোচ্ছসিত কেরোসিনের ডিপা লইয়া রমেশকে উপরে লইয়া গেল। রমেশ ভূতের মতো ঘরে ঘরে এক বার ঘুরিয়া বেড়াইল, দুই-একটা চৌকি ও সোফা বাছিয়া লইয়া তাহার উপরে বসিল । জিনিসপত্র গৃহসজ্জা সমস্তই ঠিক পূর্বের মতোই আছে, মাঝে হইতে নলিনবাবুটি কে আসিল ? পৃথিবীতে কাহারও অভাবে অধিক দিন কিছুই শূন্ত থাকে না। যে বাতায়নে রমেশ এক দিন হেমনলিনীর পাশে দাড়াইয়া ক্ষান্তবর্ষণ শ্রাবণদিনের স্বর্যাস্ত-আভায় দুটি হৃদয়ের নিঃশব্দ মিলনকে মণ্ডিত করিয়া লইয়াছিল, সেই বাতায়নে আর কি সুর্যাস্তের আভা পড়ে না ? সেই বাতায়নে আর-কেহ আসিয়া আর-এক দিন যখন যুগলমূর্তি রচনা করিতে চাহিবে তখন পূর্বইতিহাস আসিয়া কি তাহদের স্থান রোধ করিয়া দাড়াইবে, নিঃশব্দে তর্জনী তুলিয়া তাহাদিগকে দূরে সরাইয়। দিবে ? ক্ষুণ্ণ অভিমানে রমেশের হৃদয় স্ফীত হইয় উঠিতে লাগিল । পরদিন রমেশ এলাহাবাদে না গিয়া একেবারে গাজিপুরে চলিয়া গেল । \S)8 কলিকাতায় রমেশ প্রায় মাসখানেক কাটাইয়া জাসিয়াছে। এই এক মাস কমলার পক্ষে অল্পদিন নহে। কমলার জীবনে একটা পরিণতির শ্রোত হঠাৎ অত্যন্ত দ্রুতবেগে বহিতেছে । উষার আলো যেমন দেখিতে দেখিতে প্রভাতের রেীত্রে ফুটিয়া পড়ে, কমলার নারীপ্রকৃতি তেমনি অতি অল্পকালের মধ্যেই স্বপ্তি হইতে জাগরণের মধ্যে সচেতন হইয়া উঠিল। শৈলজার সহিত যদি তাহার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ন হইত, শৈলজার জীবন হইতে প্রেমালোকের ছটা ও উত্তাপ ঘদি প্রতিফলিত