পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"ఏ రి রবীন্দ্র-রচনাবলী এতদিন কমলাকে রমেশ তাহার স্বস্থানে দেখে নাই ; আজ তাহীকে আপন নূতন সংসারের শিখরদেশে যখন দেখিল তখন তাহার সৌন্দর্যের সঙ্গে একটা মহিমা দেখিতে পাইল । কমলার কাছে আসিয়া রমেশ কহিল, “কমলা, করিতেছ কী ? শ্রাস্ত হইয়া পড়িবে যে ” কমলা তাহার কাজের মাঝখানে একটুখানি থামিয় রমেশের দিকে মুখ তুলিয়া তাহার মিষ্টমুখের হাসি হাসিল ; কহিল, "না, আমার কিছু হইবে না।” রমেশ যে তাহার তত্ত্ব লইতে আসিল, এটুকু সে পুরস্কারস্বরূপ গ্রহণ করিয়া তৎক্ষণাৎ আবার কাজের মধ্যে নিবিষ্ট হইয় গেল । মুগ্ধ রমেশ ছুতা করিয়া আবার তাহার কাছে গিয়া কহিল, “তোমার গাওয়া হইয়াছে তো কমলা ?” কমলা কহিল, “বেশ, খাওয়া হয় নাই তো কী ! কোনকালে থাইয়াছি।” রমেশ এ খবর জানিত, তবু এই প্রশ্নের ছলে কমলাকে একটুখানি আদর না জানাইয়া থাকিতে পারিল না ; কমলাও রমেশের এই অনাবশ্বক প্রশ্নে যে একটুখানি খুশি হয় নাই তাহা নহে। রমেশ আবার একটুখানি কথাবার্তার স্বত্রপাত করিবার জন্ত কহিল, "কমলা, তুমি নিজের হাতে কত করিবে, আমাকে একটু খাটাইয়া লও-না।” কর্মিষ্ঠ লোকের দোষ এই, অন্য লোকের কর্মপটুতার উপরে তাহীদের বড়ো একটা বিশ্বাস থাকে না। তাহাদের ভয় হয়, যে কাজ তাহারা নিজে না করিবে সেই কাজ অন্তে করিলেই পাছে সমস্ত নষ্ট করিয়া দেয়। কমলা হাসিয়া কহিল, "না, এ-সমস্ত কাজ তোমাদের নয় ।” রমেশ কহিল, “পুরুষরা নিতান্তই সহিষ্ণু বলিয়া পুরুষজাতির প্রতি তোমাদের এই অবজ্ঞা আমরা সহ্য করিয়া থাকি, বিদ্রোহ করি না ; তোমাদের মতো যদি স্ত্রীলোক হইতাম তবে তুমুল ঝগড়া বাধাইয় দিতাম। আচ্ছ, খুড়াকে তো তুমি খাটাইতে ক্রটি কর না, আমি এতই কি অকৰ্মণ্য ?” কমলা কহিল, “তা জানি না, কিন্তু তুমি রান্নাঘরের কুল ঝাড়াইতেছ তাহ মনে করিলেই আমার হাসি পায়। তুমি এখান থেকে সরো, এখানে ভারি-ধুলা উড়াইয়াছে।” রমেশ কমলার সহিত কথা চালাইবার জন্ত বলিল, “ধুলা তো লোক-বিচার করে না, ধুলা আমাকেও যে চক্ষে দেখে তোমাকেও সেই চক্ষে দেখে।”