পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२&२ রবীন্দ্র-রচনাবলী আরও দুই-চারি দিন বিলম্বের সম্ভাবনা দেখিয়া রমেশ তাহার আদালত-প্রবেশ-সম্বন্ধীয় কাজে পরদিন এলাহাবাদে চলিয়া গেল । \O6. পরদিন কমলার নূতন বাসায় শৈলর চড়িভাতির নিমন্ত্রণ হইল। বিপিন আহারান্তে আপিসে গেলে পর শৈল নিমন্ত্রণরক্ষা করিতে গেল। কমলার অনুরোধে খুড়া সেদিন সোমবারের স্কুল কামাই করিয়াছিলেন । দুই জনে মিলিয়া নিমগাছ-তলায় রান্না চড়াইয়া দিয়াছেন, উমেশ সহায়কার্ধে ব্যস্ত হইয়া রহিয়াছে। রান্না ও আহার হইয়া গেলে পর খুড়া ঘরের মধ্যে গিয়া মধ্যাহ্ননিদ্রায় প্রবৃত্ত হইলেন এবং দুই সখীতে নিমগাছের ছায়ায় বসিয়া তাহদের সেই চিরদিনের আলোচনায় নিবিষ্ট হইল। এই গল্পগুলির সহিত মিশিয়া কমলার কাছে এই নদীর তীর, এই শীতের রৌদ্র, এই গাছের ছায়া বড়ে অপরূপ হইয়া উঠিল ; ওই মেঘশূন্ত নীলাকাশের যত স্বদুর উচ্চে রেখার মতে হইয়া চিল ভাসিতেছে কমলার বক্ষোবাসী একটা উদ্দেগুহার আকাজক্ষ তত দূরেই উধাও হইয়া উড়িয়া গেল । বেলা যাইতে না যাইতেই শৈল ব্যস্ত হইয়া উঠিল । তাহার স্বামী আপিস হইতে আসিবে। কমলা কহিল, “এক দিনও কি ভাই, তোমার নিয়ম ভাঙিবার জে নাই ?” শৈল তাহার কোনো উত্তর না দিয়া একটুখানি হাসিয়া কমলার চিবুক ধরিয়া নাড়া দিল, এবং বাংলার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহার পিতার ঘুম ভাঙাইয়া কহিল, “বাবা, আমি বাড়ি যাইতেছি।” কমলাকে খুড়া কহিলেন, “ম, তুমিও চলো।” কমলা কহিল, "না, আমার কাজ বাকি আছে, আমি সন্ধ্যার পরে যাইব ।” খুড়া তাহার পুরাতন চাকরকে ও উমেশকে কমলার কাছে রাখিয়া শৈলকে বাড়ি পৌছাইয়া দিতে গেলেন, সেখানে তাহার কিছু কাজ ছিল ; কহিলেন, “আমার ফিরিতে বেশি বিলম্ব হইবে না।” কমলা যখন তাহার ঘর-গোছানোর কাজ শেষ করিল তখনো সূর্য অস্ত যায় নাই। সে মাথায়-গায়ে একটা র্যাপার জড়াইয়া নিমগাছের তলায় আসিয়া বসিল। দূরে, ও পারে যেখানে বড়ো বড়ো গোটা-দুই-তিন নৌকার মাম্বল অগ্নিবর্ণ আকাশের গায়ে কালো আঁচড় কাটিয়া দাড়াইয়া ছিল তাহারই পশ্চাতের উচু পাড়ির আড়ালে স্বৰ্ষ নামিয়া গেল । &