পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\రిe রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাকে অত্যন্ত উদবেজিত করিয়৷ তুলিল। সে যখন প্রতিশ্রত উপহারের দাবি করিল তখন কমলা তাহার বাক্স খুলিয়া একজোড়া সোনার ব্রেসলেট বাহির করিল। এই দুর্লভ খেলনা পাইয়া উমি ভারি খুশি হইল। মাসি তাহার হাতে পরাইয়া দিতেই সে সেই ঢলঢ়লে গহনাজোড়া-সমেত দুটি হাত সন্তপণে তুলিয়া ধরিয়া সগর্বে তাহার মাকে দেখাইতে গেল। মা ব্যস্ত হইয়া যথাস্থানে প্রত্যপণ করিবার জন্য ব্রেসলেট কাড়িয়া লইল ; কহিল, “কমল, তোমার কিরকম বুদ্ধি ! এ-সব জিনিস উহার হাতে দাও কেন ?” এই দুর্ব্যবহারে উমির আর্তনাদের নালিশ গগন ভেদ করিয়া উঠিল। কমল কাছে আসিয়া কহিল, “দিদি, এ ব্রেসলেট-জোড়া আমি উমিকেই দিয়াছি।” শৈল আশ্চর্য হইয়া কহিল, “পাগল নাকি !” কমলা কহিল, “আমার মাথা খাও দিদি, এ ব্রেসলেট-জোড়া তুমি আমাকে ফিরাইতে পরিবে না। ইহা ভাঙিয়া উমির হার গড়াইয়া দিয়ে ।” শৈল কহিল, “না, সত্য বলিতেছি, তোর মতো থেপা মেয়ে আমি দেখি নাই।” এই বলিয়া কমলার গলা জড়াইয়া ধরিল। কমলা কহিল, “তোদের এখান হইতে আমি তো আজ চলিলাম দিদি – খুব সুখে ছিলাম— এমন স্বখ আমার জীবনে কখনো পাই নাই।” বলিতে বলিতে ঝর ঝর করিয়া তাহার চোখের জল পড়িতে লাগিল । শৈলও উদগত অশ্রু দমন করিয়া বলিল, “তোর রকমটা কী বল দেখি কমল, যেন কত দূরেই যাইতেছিস । যে স্থখে ছিলি সে আর আমার বুঝিতে বাকি নাই। এখন তোর সব বাধা দূর হইল, স্বখে আপন ঘরে একলা রাজত্ব করিবি - আমরা কখনো গিয়া পড়িলে ভাবিবি, আপদ বিদায় হইলেই বাচি ।” বিদায়কালে কমলা শৈলকে প্রণাম করিলে পর শৈল কহিল, “কাল দুপুরবেলা আমি তোদের ওখানে যাইব ।” কমলা তাহার উত্তরে হা-না কিছুই বলিল না। বাংলায় গিয়া কমলা দেখিল, উমেশ আসিয়াছে। কমলা কহিল, “তুই যে ! যাত্রা শুনিতে যাবি না ?” উমেশ কহিল, “তুমি যে আজ এখানে থাকিবে, আমি—” কমলা। আচ্ছা আচ্ছ, সে তোর ভাবিতে হইবে না। তুই যাত্রা শুনিতে বা, এখানে বিষণ আছে । যা, দেরি করিস নে ৷” 黨 উমেশ । এখনো তো যাত্রার অনেক দেরি। 壘