পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 'రి oS যোগেজ অধীরপ্রকৃতির লোক। সেইদিন সন্ধ্যাবেলায় চুল বাধা সারিয়া হেমনলিনী বাহির হইবামাত্র যোগেন্দ্র তাহাকে ভাকিয়া বলিল, “হেম, একটা কথা আছে।” কথা আছে শুনিয়া হেমের হৃৎকম্প হইল । যোগেন্দ্রের অনুবর্তী হইয়া আস্তে আস্তে বসিবার ঘরে আসিয়া বসিল। ষোগেজ কহিল, “হেম, বাবার শরীরটা কিরকম খারাপ হইয়াছে দেখিয়াছ ?” হেমনলিনীর মুখে একটা উদবেগ প্রকাশ পাইল ; সে কোনো কথা কহিল না। যোগেন্দ্র । আমি বলিতেছি, ইহার একটা প্রতিকার না করিলে উনি একটা শক্ত ব্যামোয় পড়িবেন । হেমনলিনী বুঝিল, পিতার এই অস্বাস্থ্যের জন্য অপরাধ তাহারই উপরে পড়িতেছে। সে মাথা নিচু করিয়া মানমুখে কাপড়ের পাড় লইয়া টানিতে লাগিল । যোগেন্দ্ৰ কহিল, "ষা হইয়া গেছে সে তো হইয়াই গেছে, তাহা লইয়া যতই আক্ষেপ করিতে থাকিব, ততই আমাদের লজ্জার কথা। এখন বাবার মনকে যদি সম্পূর্ণ স্বস্থ করিতে চাও তবে যত শীঘ্র পার এই-সমস্ত অপ্রিয় ব্যাপারের একেবারে গোড়া মারিয়া ফেলিতে হইবে।” এই বলিয়া উত্তর প্রত্যাশা করিয়া যোগেন্দ্র হেমনলিনীর মুখের দিকে চাহিয়া চুপ করিয়া রহিল । হেম সলজমুখে কহিল, “এ-সমস্ত কথা লইয়া আমি ষে কোনোদিন বাবাকে বিরক্ত করিব, এমন সম্ভাবনা নাই।” যোগেন্দ্র। তুমি তো করিবে না জানি, কিন্তু তাহাতে তো অন্য লোকের মুখ বন্ধ হুইবে না । A হেম কহিল, “তা আমি কী করিতে পারি বলে ।” যোগেন্দ্র । চারি দিকে এই-যে সব নানা কথা উঠিয়াছে তাহ বন্ধ করিবার একটিমাত্র উপায় আছে । যোগেন্দ্র যে উপায় মনে মনে ঠাওরাইয়াছে হেমনলিনী তাহা বুঝিতে পারিয়া তাড়াতাড়ি কহিল, “এখনকার মতো কিছু দিন বাবাকে লইয়া পশ্চিমে বেড়াইতে গেলে ভালো হয় না ? দু চার মাস কাটাইয়া আসিলে ততদিনে সমস্ত গোল থামিয়া যাইবে।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তাহাতেও সম্পূর্ণ ফল হইবে না। তোমার মনে কোনো ক্ষোভ নাই, যতদিন বাবা এ কথা নিশ্চয় না বুঝিতে পরিবেন ততদিন তাহার মনে শেল বিধিয়া থাকিবে— ততদিন তাহাকে কিছুতেই স্বস্থ হইতে দিবে না।” ●