পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ט צ9\ দেখিতে দেখিতে হেমনলিনীর দুই চোখ জলে ভাসিয়া গেল। সে তাড়াতাড়ি জল মুছিয়া ফেলিল ; কহিল, “আমাকে কী করিতে বল।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তোমার কানে কঠোর শুনাইবে আমি জানি, কিন্তু সকল দিকের মঙ্গল যদি চাও, তোমাকে কালবিলম্ব না করিয়া বিবাহ করিতে হইবে।” হেমনলিনী স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। যোগেন্দ্র অধৈর্য সংবরণ করিতে না পারিয়া বলিয়া উঠিল, “হেম, তোমরা কল্পনাদ্বারা ছোটো কথাকে বড়ো করিয়া তুলিতে ভালোবাস। তোমার বিবাহ সম্বন্ধে যেমন গোলমাল ঘটিয়াছে এমন কত মেয়ের ঘটিয়া থাকে, আবার চুকিয়া-বুকিয়া পরিষ্কার হইয়া যায় ; নহিলে, ঘরের মধ্যে কথায় কথায় নভেল তৈরি হইতে থাকিলে তো লোকের প্রাণ বঁাচে না । ‘চিরজীবন সন্ন্যাসিনী হইয়া ছাদে বসিয়া আকাশের দিকে তাকাইয়া থাকিব? সেই অপদার্থ মিথ্যাচারীটার স্মৃতি হৃদয়মন্দিরে স্থাপন করিয়া পূজা করিব – পৃথিবীর লোকের সামনে এই-সমস্ত কাব্য করিতে তোমার লজ্জা করিবে না, কিন্তু আমরা যে লজ্জায় মরিয়া যাই। ভদ্র গৃহস্থঘরে বিবাহ করিয়া এই-সমস্ত লক্ষ্মীছাড়া কাব্য যত শীঘ্র পার চুকাইয়া ফেলো।” লোকের চোখের সামনে কাব্য হইয়া উঠিবার লজ্জা যে কতথানি তাহা হেমনলিনী বিলক্ষণ জানে, এই জন্য যোগেন্দ্রের বিদ্রুপবাক্য তাহাকে ছুরির মতো বিধিল । সে কহিল, "দাদা, আমি কি বলিতেছি সন্ন্যাসিনী হইয়া থাকিব, বিবাহ করিব না ?” যোগেন্দ্র কহিল, “তাহা যদি না বলিতে চাও তো বিবাহ করে। অবশু, তুমি যদি বল স্বৰ্গরাজ্যের ইন্দ্রদেবকে না হইলে তোমার পছন্দ হইবে না, তাহা হইলে সেই সন্ন্যাসিনীব্রতই গ্রহণ করিতে হয়। পৃথিবীতে মনের মতে কটা জিনিসই বা মেলে, যাহা পাওয়া যায় মনকে তাহারই মতো করিয়া লইতে হয়। আমি তো বলি ইহাতেই মাহুষের যথার্থ মহত্ত্ব ।” "...” হেমনলিনী মর্মাহত হইয়া কহিল, "দাদা, তুমি আমাকে এমন করিয়া খোটা দিয়া কথা বলিতেছ কেন ? আমি কি তোমাকে পছন্দ লইয়া কোনো কথা বলিয়াছি ?” اسے যোগেন্দ্র। বল নাই বটে, কিন্তু আমি দেখিয়াছি, অকারণে এবং অন্যায় কারণে তোমার কোনো কোনো হিতৈষী বন্ধুর উপরে তুমি স্পষ্ট বিদ্বেষপ্রকাশ করিতে কুষ্ঠিত হও না । কিন্তু এ কথা তোমাকে স্বীকার করিতেই হইবে, এ জীবনে যত লোকের সঙ্গে তোমার আলাপ হইয়াছে তাহদের মধ্যে এক জন লোককে দেখা গেছে যে ব্যক্তি স্বখে-দুঃখে মানে-অপমানে তোমার প্রতি হৃদয় স্থির রাথিয়াছে। এই কারণে আমি তাহাকে মনে মনে অত্যস্ত শ্রদ্ধা করি । তোমাকে সুখী করিবার জন্ত জীবন দিতে