পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ নৌকাডুবি । ○>> পারে এমন স্বামী যদি চাও, তবে সে লোককে খুজিতে হইবে না । আর যদি কাব্য করিতে চাও তবে— Är হেমনলিনী উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, “এমন করিয়া তুমি আমাকে বলিয়ে না। বাবা আমাকে যেরূপ আদেশ করিবেন, যাহাকে বিবাহ করিতে বলিবেন, আমি পালন করিব। যদি না করি, তখন তোমার কাব্যের কথা তুলিয়ে।” যোগেন্দ্র তৎক্ষণাং নরম হইয়া কহিল, “হেম, রাগ করিয়ো না বোন। আমার মন খারাপ হইয়া গেলে মাথার ঠিক থাকে না জান তো— তখন যাহা মুখে আসে তাহাই বলিয়া বসি । আমি কি ছেলেবেলা হইতে তোমাকে দেখি নাই, আমি কি জানি না লজ্জা তোমার পক্ষে কত স্বাভাবিক এবং বাবাকে তুমি কত ভালোবাস ।” এই বলিয়া যোগেন্দ্র অন্নদাবাবুর ঘরে চলিয়া গেল । যোগেন্দ্র তাহার বোনের উপর না জানি কিরূপ উৎপীড়ন করিতেছে, তাহাই কল্পনা করিয়া অন্নদা তাহার ঘরে উদবিগ্ন হইয়া বসিয়া ছিলেন ; ভাইবোনের কথোপকথনের মাঝখানে গিয়া পড়িবার জন্য উঠিউঠি করিতেছিলেন, এমন সময় যোগেন্দ্ৰ আসিয়া উপস্থিত হইল— অন্নদা তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “বাবা, হেম বিবাহ করিতে সম্মত হইয়াছে। তুমি মনে করিতেছ, আমি বুঝি খুব বেশি জেদ করিয়া তাহাকে রাজি করাইয়াছি— তাহা মোটেই নয়। এখন, তুমি তাহাকে এক বার মুখ ফুটিয়া বলিলেই সে অক্ষয়কে বিবাহ করিতে আপত্তি করিবে না ।” অন্নদা কহিলেন, “আমাকে বলিতে হইবে ?” যোগেন্দ্র । তুমি না বলিলে সে কি নিজে আসিয়া বলিবে ‘আমি অক্ষয়কে বিবাহ করিব ? আচ্ছা, নিজের মুখে তোমার বলিতে যদি সংকোচ হয় তবে আমাকে অনুমতি করো, আমি তোমার আদেশ তাহাকে জানাই গে । অন্নদা ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “না না, আমার যাহা বলিবার, আমি নিজেই বলিব। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি করিবার প্রয়োজন কী ? আমার মতে আর কিছুদিন যাইতে দেওয়া উচিত।” যোগেন্দ্র কহিল, "না বাবা, বিলম্বে নানা বিন্ন হইতে পারে--- এ রকম ভাবে বেশি দিন থাকা কিছু নয়।” যোগেন্দ্রের জেদের কাছে বাড়ির কাহারও পারিবার জো নাই ; সে যাহা ধরিয়া বসে তাহ সাধন না করিয়া ছাড়ে না । অন্নদা তাহাকে মনে মনে ভয় করেন । তিনি আপাতত কথাটাকে ঠেকাইয়া রাখিবার জন্ত বলিলেন, “আচ্ছা, আমি বলিব ।”