পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●>ぐり রবীন্দ্র-রচনাবলী মতো জলিতে লাগিল। সে কহিল, “না, আমার আর এখানে থাকা পোষাইল না। আমি যেখানে হোক একটা ইস্কুল-মাস্টারি লইয়া এখান হইতে চলিয়া যাইব ।” অক্ষয় কহিল, “ভাই, তুমি মিথ্যা রাগ করিতেছ। আমি তো তখনি সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছিলাম যে, তুমি ভুল বুঝিয়াছ। তুমি আমাকে বারংবার আশ্বাস দেওয়াতেই আমি বিচলিত হইয়াছিলাম। কিন্তু আমি নিশ্চয় বলিতেছি আমার প্রতি হেমনলিনীর মন কোনো দিন অনুকূল হইবে না। অতএব সে আশা ছাড়িয়া দাও । কিন্তু আসল কথা এই যে, উনি যাহাতে রমেশকে ভুলিতে পারেন সেটা তোমাদের করা কর্তব্য ।” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তুমি তো বলিলে কর্তব্য, উপায়টা কী শুনি।” অক্ষয় কহিল, “আমি ছাড়া জগতে আর বিবাহযোগ্য যুবাপুরুষ নাই নাকি ? আমি দেখিতেছি, তুমি যদি তোমার বোন হইতে তবে আমার আইবড়ে নাম ঘোচাইবার জন্য পিতৃপুরুষদিগকে হতাশভাবে দিন গণনা করিতে হইত না । যেমন করিয়া হোক, একটি ভালো পাত্র যোগাড় করা চাই যাহার প্রতি তাকাইবামাত্র অবিলম্বে কাপড় রৌদ্রে দিবার ইচ্ছা প্রবল হইয়া না ওঠে।” যোগেন্দ্র । পাত্র তো ফর্মাশ দিয়া মেলে না । অক্ষয়। তুমি একেবারে এত অল্পেই হাল ছাড়িয়া দিয়া বসে। কেন : পাত্রের সন্ধান আমি বলিতে পারি, কিন্তু তাড়াহুড়া যদি কর তবে সমস্ত মাটি হইয়া যাইবে। প্রথমেই বিবাহের কথা পাড়িয়া দুই পক্ষকে সশঙ্কিত করিয়া তুলিলে চলিবে না। আস্তে আস্তে আলাপ-পরিচয় জমিতে দাও, তাহার পরে সময় বুঝিয়া দিনস্থির করিয়ো । যোগেন্দ্র। প্রণালীটি অতি উত্তম, কিন্তু লোকটি কে শুনি । অক্ষয়। তুমি তাহাকে তেমন ভালো করিয়া জান না, কিন্তু দেখিয়াছ। নলিনাক্ষ ডাক্তার । যোগেন্দ্র । নলিনাক্ষ ! অক্ষয়। চমকাও কেন ? তাহাকে লইয়া ব্রাহ্মসমাজে গোলমাল চলিতেছে, চলুকনা। তা বলিয়া অমন পাত্রটিকে হাতছাড়া করিবে ? যোগেন্দ্র। আমি হাত তুলিয়া লইলেই অমনি পাত্র যদি হাতছাড়া হইত, তা হইলে ভাবনা কি ছিল ? কিন্তু নলিনাক্ষ বিবাহ করিতে কি রাজি হইবেন ? অক্ষয়। আজই হইবেন এমন কথা বলিতে পারি না, কিন্তু সময়ে কী না হইতে পারে। যোগেন, আমার কথা শোনো। কাল নলিনাক্ষের বস্তৃতার দিন আছে,