পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি S))。 মনে মনে ক্ষোভ ছিল । তাই তাড়াতাড়ি বিশেষ সমাদরের স্বরে কহিলেন, “এসো যোগেন্দ্র, বোসো ।” যোগেন্দ্র কহিল, “বাবা, তোমরা যে কোনোখানে বাহির হওয়া একেবারেই ছাড়িয়া দিয়াছ । দুজনে দিনরাত্রি ঘরে বসিয়া থাকা কি ভালো ?” অন্নদা কহিলেন, “ওই শোনো। আমরা তো চিরকাল এইরকম কোণে বসিয়াই কাটাইয়া দিয়াছি। হেমকে তো কোথাও বাহির করিতে হইলে মাথা-খোড়াখুড়ি করিতে হইত।” হেম কহিল, "কেন বাবা আমার দোষ দাও? তুমি কোথায় আমাকে লইয়৷ যাইতে চাও, চলো-না।” হেমনলিনী আপনার প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়াও সবলে প্রমাণ করিতে চায় যে, সে মনের মধ্যে একটা শোক চাপিয়া ধরিয়া ঘরের মাটি অণকড়াইয়া পড়িয়া নাই— তাহার চারি দিকে যেখানে যাহা-কিছু হইতেছে সব বিষয়েই যেন তাহার ঔংস্থক্য অত্যন্ত সজীব হইয়া আছে । যোগেন্দ্র কহিল, “বাবা, কাল একটা মিটিঙ আছে, সেখানে হেমকে লইয়া চলো না ।” অন্নদা জানিতেন, মিটিঙের ভিড়ের মধ্যে প্রবেশ করিতে হেমনলিনী চিরদিনই একান্ত অনিচ্ছা ও সংকোচ অনুভব করে ; তাই তিনি কিছু না বলিয়া একবার হেমের মুখের দিকে চাহিলেন। হেম হঠাৎ একটা অস্বাভাবিক উৎসাহ প্রকাশ করিয়া কহিল, “মিটিং ? সেখানে কে বক্তৃতা দিবে দাদা ?” যোগেন্দ্র । নলিনাক্ষ ডাক্তার। অন্নদা। নলিনাক্ষ । ষোগেন্দ্র । ভারি চমৎকার বলিতে পারেন । তা ছাড়া, লোকটার জীবনের ইতিহাস শুনিলে আশ্চর্য হইয়া যাইতে হয়। এমন ত্যাগস্বীকার! এমন দৃঢ়তা ! এরকম মানুষের মতো মানুষ পাওয়া দুর্লভ । আর ঘণ্টা-দুই আগে একটা অস্পষ্ট জনশ্রুতি ছাড়া নলিনাক্ষ সম্বন্ধে যোগেন্দ্র কিছুই জানিত না । ነ হেম একটা আগ্রহ দেখাইয়া কহিল, “বেশ তো বাবা, চলো-না, তাহার বক্তৃতা শুনিতে যাইব ।” হেমনলিনীর এইরূপ উৎসাহের ভাবটাকে অন্নদা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিলেন না ;