পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\bog রবীন্দ্র-রচনাবলী মেজের উপরে পড়িয়াছিল, তাহারই দিকে তাকাইয়া সে চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। নলিনাক্ষের যখন উঠিবার সময় হইল তখন সে কহিল, “আপনার মা কেমন থাকেন সে খবর আমরা যেন জানিতে পাই ।” নলিনাক্ষ উঠিয়া দাড়াইতেই হেমনলিনী পুনর্বার তাহাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিল। 88 এ কয়দিন অক্ষয় দেখা দেয় নাই । নলিনাক্ষ কাশীতে চলিয়া গেলে আজ সে যোগেন্দ্রের সঙ্গে অন্নদাবাবুর চায়ের টেবিলে দেখা দিয়াছে। অক্ষয় মনে মনে স্থির করিয়াছিল যে, রমেশের স্মৃতি হেমনলিনীর মনে কতখানি জাগিয়া আছে তাহা পরিমাপ করিবার সহজ উপায় অক্ষয়ের প্রতি তাহার বিরাগপ্রকাশ । আজ দেখিল, হেমনলিনীর মুখ প্রশান্ত ; অক্ষয়কে দেখিয়া তাহার মুখের ভাব কিছুমাত্র বিকৃত হইল না ; সহজ প্রসন্নতার সহিত হেমনলিনী কহিল, “আপনাকে যে এতদিন দেখি নাই ?” অক্ষয় কহিল, “আমরা কি প্রত্যহ দেখিবার যোগ্য ?” হেমনলিনী হাসিয়া কহিল, “সে যোগ্যতা না থাকিলে যদি দেখাশোনা বন্ধ করা উচিত বোধ করেন, তবে আমাদের অনেককেই নির্জনবাস অবলম্বন করিতে হয় ।” যোগেন্দ্র। অক্ষয় মনে করিয়াছিল একলা বিনয় করিয়া বাহাদুরি লইবে, হেম তাহার উপরেও টেক্কা দিয়া সমস্ত মন্ত্যজাতির হইয়া বিনয় করিয়া লইল, কিন্তু এ সম্বন্ধে আমার একটুখানি বলিবার কথা আছে। আমাদের মতো সাধারণ লোকই প্রত্যহ দেখাশোনার যোগ্য— আর যারা অসাধারণ, তাহাদিগকে কদাচ-কখনো দেখাই ভালো, তাহার বেশি সহ করা শক্ত। এইজন্যই তো অরণ্যে-পর্বতে-গহবরেই প্তাহার ঘূরিয়া বেড়ান— লোকালয়ে তাহারা স্থায়িভাবে বসতি আরম্ভ করিয়া দিলে অক্ষয়-যোগেন্দ্র প্রভৃতি নিতান্তই সামান্ত লোকদের অরণ্যে-পর্বতে ছুটিতে হইত। যোগেন্দ্রের কথাটার মধ্যে ষে খোচা ছিল, হেমনলিনীকে তাহা বিধিল। কোনো উত্তর না দিয়া তিন পেয়াল চা তৈরি করিয়া সে অন্নদা অক্ষয় ও যোগেঞ্জের সম্মুখে স্থাপন করিল। যোগেন্দ্ৰ কহিল, “তুমি বুঝি চা খাইবে না ?” হেমনলিনী জানিত, এবার যোগেজের কাছে কঠিন কথা শুনিতে হইবে, তবু সে শাস্ত দৃঢ়তার সহিত বলিল, “না, আমি চ ছাড়িয়া দিয়াছি।”