পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VවීමV রবীন্দ্র-রচনাবলী বলিল, তাহার যকৃতের বিকার উপস্থিত হইয়াছে— এখনো রোগ অগ্রসর হয় নাই, এইবেল পশ্চিমে কোনো স্বাস্থ্যকর স্থানে গিয়া বৎসরখানেক কিংবা ছয় মাস বাস করিয়া আসিলে শরীর নির্দোষ হইতে পরিবে । বেদনা উপশম হইলে ও ডাক্তার চলিয়া গেলে অন্নদাবাৰু কহিলেন, “হেম, চলে৷ মা, আমরা কিছুদিন নাহয় কাশীতে গিয়াই থাকি।” ঠিক একই সময়ে হেমনলিনীর মনেও সে কথা উদয় হইয়াছিল। নলিনাক্ষ চলিয়া যাইবামাত্র হেম আপন সাধনসম্বন্ধে একটা দুর্বলতা অনুভব করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। নলিনাক্ষের উপস্থিতিমাত্রই হেমনলিনীর সমস্ত আহ্নিকক্রিয়াকে যেন দৃঢ় অবলম্বন দিত। নলিনাক্ষের মুখশ্ৰীতেই যে একটা স্থির নিষ্ঠ ও প্রশান্ত প্রসন্নতার দীপ্তি ছিল তাহাই হেমনলিনীর বিশ্বাসকে সর্বদাই যেন বিকশিত করিয়া রাথিয়াছিল, নলিনাঙ্গের অবর্তমানে তাহার উৎসাহের মধ্যে যেন একটা স্নান ছায়া আসিয়া পড়িল । তাই আজ সমস্তদিন হেমনলিনী নলিনাক্ষের উপদিষ্ট সমস্ত অনুষ্ঠান অনেক জোর করিয়া এবং বেশি করিয়া পালন করিয়াছে। কিন্তু তাহাতে শ্রাস্তি আসিয়া এমনি নৈরাপ্ত উপস্থিত হইয়াছিল যে, সে অশ্র সংবরণ করিতে পারে নাই ; চায়ের টেবিলে দৃঢ়তার সহিত সে আতিথ্যে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, কিন্তু তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া ছিল। আবার তাহাকে তাহার সেই পূর্বস্মৃতির বেদন দ্বিগুণবেগে আক্রমণ করিয়াছে— আবার তাহার মন যেন গৃহহীন-আশ্রয়হীনের মতে। হা হা করিয়া বেড়াইতে উদ্যত হইয়াছে। তাই যখন সে কাশী যাইবার প্রস্তাব শুনিল তখন ব্যগ্র হইয়া কহিল, “বাবা, সেই বেশ হইবে।” পরদিন একটা আয়োজনের উদযোগ দেখিয়া যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কী, ব্যাপারটা কী ?” অন্নদা কহিলেন, “আমরা পশ্চিমে যাইতেছি ।” যোগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “পশ্চিমে কোথায় ?” অন্নদা কহিলেন, "ঘুরিতে ঘুরিতে একটা কোনো জায়গা পছন্দ করিয়া লইব ।” তিনি যে কাণীতে যাইতেছেন, এ কথা এক দমে যোগেন্দ্রের কাছে বলিতে সংকুচিত হইলেন। যোগেন্দ্র কহিল, “আমি কিন্তু এবার তোমাদের সঙ্গে যাইতে পারিব না। আমি সেই হেড মাস্টারির জন্য দরখাস্ত পাঠাইয়া দিয়াছি, তাহার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করিতেছি।”