পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○br রবীন্দ্র-রচনাবলী দুই-এক জন দেখা দিতেছে। পথের ওপারে কুটির প্রাঙ্গণে কোনো পল্লীনারী বিচিত্র উচ্চ স্বরে গান গাহিতে গাহিতে জাতীয় গম ভাঙিতে আরম্ভ করিয়াছে । রমেশ বাংলাঘরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, বিষন পুনরায় গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন । । তখন সে নত হইয়া দুই হাতে খুব করিয়া বিষনকে ঝণকানি দিতে লাগিল ; দেগিল, তাহার নিশ্বাসে তাড়ির প্রবল গন্ধ ছুটিতেছে। ঝণকানির বিষম বেগে বিষন অনেকটা প্রকৃতিস্থ হইয়া ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া দাড়াইল। রমেশ পুনর্বার জিজ্ঞাসা করিল, “বহুজি কোথায় ?” বিষন কহিল, “বহুজি তো ঘরেই আছেন।” রমেশ । কই, ঘরে কোথায় ? বিষন। কাল তো এখানেই আসিয়াছেন । রমেশ । তাহার পরে কোথায় গেছেন ? বিষন ই করিয়া রমেশের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল। এমন সময়ে খুব চওড়া পাড়ের এক বাহারে ধুতি পরিয়া চাদর উড়াইয়া রক্তবর্ণচক্ষু উমেশ আসিয়া উপস্থিত হইল। রমেশ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “উমেশ তোর মা কোথায় ?” উমেশ কহিল, “মা তো কাল হইতে এখানেই আছেন।” রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “তুই কোথায় ছিলি ?” উমেশ কহিল, “আমাকে মা কাল বিকালে সিধুবাবুদের বাড়ি যাত্রা শুনিতে পাঠাইয়াছিলেন।” গাড়োয়ান আসিয়া কহিল, “বাবু, আমার ভাড়া।” রমেশ তাড়াতাড়ি সেই গাড়িতে চড়িয়া একেবারে খুড়ার বাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইল। সেখানে গিয়া দেখিল, বাড়িশুদ্ধ সকলেই যেন চঞ্চল। রমেশের মনে হইল, কমলার বুঝি কোনো অমৃদ্ধ করিয়াছে। কিন্তু তাহা নহে। কাল সন্ধ্যার কিছু পরেই উমা হঠাৎ অত্যন্ত চীংকার করিয়া কাদিতে আরম্ভ করিল এবং তাহার মুখ নীল ও হাত-পা ঠাণ্ড হইয়া পড়ায় সকলেই অত্যস্ত ভয় পাইয়া গেল। তাহার চিকিৎসা লইয়া কাল বাড়িমৃদ্ধ সকলেই ব্যতিব্যস্ত হইয়া ছিল। সমস্ত রাত কেহ ঘুমাইতে পায় नांझे । রমেশ মনে করিল, উমির অমুখ হওয়াতে নিশ্চয়ই কাল কমলাকে এখানে জানানো হইয়াছিল। বিপিনকে কহিল, "কমলা তা হইলে উমিকে লইয়া খুবই উদবিগ্ন হইয়া আছে ?”