পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

98 о রবীন্দ্র-রচনাবলী বিপিন । বোধ হয়, ও বাংলায় দেখিতে না পাইয়া তিনি ঠিক করিয়াছেন, কমল৷ এখানেই আছেন। তিনি তো আমাদের এখানেই আসিয়াছেন।. শৈল । ষাও যাও, শীঘ্ৰ যাও, তাহাকে লইয়া খোজ করে গে। উমি এখন ' ঘুমাইতেছে— সে ভালোই আছে । বিপিন ও রমেশ আবার সেই গাড়িতে উঠিয়া বাংলায় ফিরিয়া গেল এবং বিষনকে লইয়া পড়িল। অনেক চেষ্টায় জোড়াতাড়া দিয়া যেটুকু খবর বাহির হইল তাহা এই — কাল বৈকালে কমলা একলা গঙ্গার ধারের অভিমুখে চলিয়াছিল। বিষন তাহার সঙ্গে যাইবার প্রস্তাব করে, কমলা তাহার হাতে একটা টাকা দিয়া তাহাকে নিষেধ করিয়া ফিরাইয়া দেয়। সে পাহারা দিবার জন্য বাগানের গেটের কাছে বসিয়া ছিল, এমন সময়ে গাছ হইতে সদ্যঃসঞ্চিত ফেনোচ্ছেল তাড়ির কলস বঁাকে করিয়া তাড়িওয়াল তাহার সম্মুখ দিয়া চলিয়া যাইতেছিল— তাহার পর হইতে বিশ্বসংসারে কী যে ঘটিয়াছে তাহা বিষনের কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট নহে। যে পথ দিয়া কমলাকে গঙ্গার দিকে যাইতে দেখিয়াছিল বিষন তাহ দেখাইয়া দিল । সেই পথ অবলম্বন করিয়া শিশিরসিক্ত শস্যক্ষেত্রের মাঝখান দিয়া রমেশ বিপিন ও উমেশ কমলার সন্ধানে চলিল । উমেশ হৃতশাবক শিকারি জন্তুর মতো চারি দিকে তীক্ষ ব্যাকুল দৃষ্টি প্রেরণ করিতে লাগিল। গঙ্গার তটে আসিয়া তিন জনে এক বার দাড়াইল । সেখানে চারি দিক উন্মুক্ত। ধূসর বালুক প্রভাতরৌদ্রে ধু-ধু করিতেছে। কোথাও কাহাকেও দেখা গেল না। উমেশ উচ্চকণ্ঠে চীৎকার করিয়া ডাকিল, “মা, মা গো, মা কোথায়?” ও পারের স্বদুর উচ্চতীর হইতে তাহার প্রতিধ্বনি ফিরিয়া আসিল— কেহই সাড়া দিল না। খুজিতে খুজিতে উমেশ হঠাৎ দূরে সাদা কী একটা দেখিতে পাইল । তাড়াতাড়ি কাছে আসিয়া দেখিল, জলের একেবারে ধারেই এক গোছা চাবি একটা রুমালে বাধা পড়িয়া আছে। “কি রে ওটা কী ?” বলিয়া রমেশও আসিয়া পড়িল। দেখিল, কমলারই চাবির গোছা । যেখানে চাবি পড়িয়াছিল সেখানে বালুতটের প্রান্তভাগে পলিমাটি পড়িয়াছে । সেই কাচা মাটির উপর দিয়া গঙ্গার জল পর্যন্ত ছোটাে দুইটি পায়ের গভীর চিহ্ন পড়িয়া গেছে। খানিকটা জলের মধ্যে একটা কী ঝিকঝিক করিতেছিল, তাহ উমেশের দৃষ্টি এড়াইতে পারিল না ; সে সেটা তাড়াতাড়ি তুলিয়া ধরিতেই দেখা গেল, সোনার উপরে এনামেল-করা একটি ছোটো ব্রোচ— ইহা রমেশেরই উপহার। o এইরূপে সমস্ত সংকেতই যখন গঙ্গার জলের দিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করিল