পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も88 রবীন্দ্র-রচনাবলী চলিয়া যাইবার সময়, মাঝে মাঝে তাহদের বাড়ির তত্ত্বাবধানের জন্য অক্ষয়ের উপর ভার দিয়া গিয়াছিল। অক্ষয় ষে ভার গ্রহণ করে তাহ রক্ষণ করিতে কখনো শৈথিল্য করে না; তাই সে হঠাৎ যখন-তখন আসিয়া দেখিয়া যায়, বাড়ির বেহারা দুজনের মধ্যে এক জনও হাজির থাকিয়া খবরদারি করিতেছে কি না। r-*. চন্দ্রমোহন তাহাকে কহিল, "রমেশবাবু এই খানিক ক্ষণ হইল এখান হইতে চলিয়া গেলেন ।” অক্ষয় । বলেন কী ? কী করিতে আসিয়াছিলেন ? চন্দ্র। তাহা তো জানি না। আমার কাছে অন্নদাবাবুদের সমস্ত খবর জানিয়া লইলেন। এমন রোগ হইয়া গেছেন, হঠাৎ তাহাকে চেনাই কঠিন ; যদি বেহারাকে ন। ডাকিতেন আমি চিনিতে পারিতাম না । অক্ষয় । এখন কোথায় থাকেন, খবর পাইলেন ? চন্দ্র। এতদিন গাজিপুরে ছিলেন ; এখন সেখান হইতে উঠিয়া আসিয়াছেন, কোথায় থাকিবেন ঠিক করিয়া বলিতে পারিলেন না। অক্ষয় বলিল, “ও ” বলিয়া আপন কর্মে মন দিল । রমেশ বাসায় ফিরিয়া আসিয়া ভাবিতে লাগিল, “অদৃষ্ট এ কী বিষম কৌতুকে প্রবৃত্ত হইয়াছে। এক দিকে আমার সঙ্গে কমলার ও অন্য দিকে নলিনাক্ষের সঙ্গে হেমনলিনীর এই মিলন, এ যে একেবারে উপন্যাসের মতো— সেও কুলিখিত উপন্যাস । এমনতরো ঠিক উলটাপালটা মিল করিয়া দেওয়া অদৃষ্টেরই মতো বে-পরোয় রচয়িতার পক্ষেই সম্ভব— সংসারে সে এমন অদ্ভূত কাণ্ড ঘটায় যাহা ভীরু লেখক কাল্পনিক উপাখ্যানে লিখিতে সাহস করে না । কিন্তু রমেশ ভাবিল, এবার সে যখন তাহার জীবনের সমস্তাজাল হইতে মুক্ত হইয়াছে, তখন খুব সম্ভব, অদৃষ্ট এই জটিল উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে রমেশের পক্ষে নিদারুণ উপসংহার লিখিবে না। যোগেন্দ্র বিশাইপুর জমিদার-বাড়ির নিকটবর্তী একটি একতলা বাড়িতে বাসা পাইয়াছিল ; সেখানে রবিবার সকালে খবরের কাগজ পড়িতেছিল এমন সময় বাজারের একটি লোক তাহার হাতে একথানি চিঠি দিল । খামের উপরকার অক্ষর দেখিয়াই সে আশ্চর্য হইয়া গেল। খুলিয়া দেখিল রমেশ লিথিয়াছে— সে বিশাইপুরের একটি দোকানে অপেক্ষা করিতেছে, বিশেষ কয়েকটি কথা বলিবার আছে। যোগেন্দ্র একেবারে চৌকি ছাড়িয়া লাফাইয়া উঠিল। রমেশকে যদিও সে একদিন অপমান করিতে বাধ্য হইয়াছিল তবু সেই বাল্যবন্ধুকে এই দূরদেশে