পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8やり রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু আমার ইচ্ছা স্বতন্ত্র, সেটা আমি তাকে কিছু প্রবলভাবে বুঝাইয়া দিয়াছি। তবু যে টিকিয়া আছি সে আমার নিজগুণে নয়। এখানকার জয়েন্ট সাহেব আয়ুকে অত্যন্ত পছন্দ করিয়াছেন ; জমিদারটি সেইজন্য ভয়ে আমাকে বিদায় করিতে পারিতেছেন না। যেদিন গেজেটে দেখিব, জয়েন্ট, বদলি হইতেছেন সেইদিনই বুঝিব, আমার হেডমাস্টারি-স্বর্য বিশাইপুরের আকাশ হইতে অস্তমিত হইল। ইতিমধ্যে এখানে আমার একটিমাত্র আলাপী আছে, আমার পাঞ্চ কুকুরটি। আর-সকলেই আমার প্রতি যেরূপ দৃষ্টিনিক্ষেপ করিতেছে তাহাকে কোনোমতেই শুভদৃষ্টি বলা চলে না। যোগেন্দ্রের বাসায় আসিয়া রমেশ একটা চৌকিতে বসিল । যোগেন্দ্ৰ কহিল, “না, বসা নয়। আমি জানি প্রাতঃস্নান নামে তোমার একটা ঘোরতর কুসংস্কার আছে, সেটা সারিয়া এসো। ইতিমধ্যে আর-এক বার গরম জলের কাৎলিট আগুনে চড়াইয়া দিই। আতিথ্যের দোহাই দিয়া আজ দ্বিতীয় বার চা খাইয়া লইব ।” এইরূপে আহার আলাপ ও বিশ্রামে দিন কাটিয়া গেল। রমেশ যে বিশেষ কথাটা বলিবার জন্য এখানে আসিয়াছিল যোগেন্দ্র সমস্ত দিন তাহা কোনোমতেই বলিবার অবকাশ দিল না। সন্ধ্যার পরে আহারাস্তে কেরোসিনের আলোকে দুই জনে দুই কেদারা টানিয়া লইয়া বসিল। অদূরে শৃগাল ডাকিয়া গেল ও বাহিরে অন্ধকার রাত্রি ঝিল্লির শব্দে স্পন্দিত হইতে লাগিল । রমেশ কহিল, “যোগেন, তুমি তো জানই, তোমাকে কী কথা বলিতে আমি এখানে আসিয়াছি। এক দিন তুমি আমাকে যে প্রশ্ন করিয়াছিলে সে প্রশ্নের উত্তর করিবার সময় তখন উপস্থিত হয় নাই। আজ আর উত্তর দিবার কোনো বাধা নাই।” * এই বলিয়া রমেশ কিছুক্ষণ স্তন্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। তাহার পরে ধীরে ধীরে সে আগাগোড়া সমস্ত ঘটনা বলিয়া গেল। মাঝে মাঝে তাহার স্বর রুদ্ধ হইয়া কণ্ঠ কম্পিত হইল, মাঝে মাঝে কোনো কোনো জায়গায় সে দুই-এক মিনিট চুপ করিয়া রহিল। যোগেন্দ্র কোনো কথা না বলিয়া স্থির হইয়া শুনিল । যখন বলা হইয়া গেল তখন যোগেন্দ্র একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, “এইসকল কথা যদি সেদিন বলিতে, আমি বিশ্বাস করিতে পারিতাম না ।” রমেশ। বিশ্বাস করার হেতু তখনে যেটুকু ছিল, এখনো তাহাই আছে। সেজন্য তোমার কাছে আমার এই প্রার্থনা যে, আমি যে গ্রামে বিবাহ করিয়াছিলাম সে গ্রামে এক বার তোমাকে যাইতে হইবে। তাহার পর সেখান হইতে কমলার মাতুলালয়েও লইয়া যাইব ।