পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

'ථ68 রবীন্দ্র-রচনাবলী মুছিয়া ফেলিলেন । এমনি করিয়া, হেমনলিনীর খোপা খুলিয়া ফেলিয়া তাহার সুদীর্ঘ কেশগুচ্ছ লইয়৷ প্রত্যহ নূতন-নূতন রকম বিনানি করিতে ক্ষেমংকরীর ভারি ভালো লাগিত । এমনও হইয়াছে, তিনি তাহার সেই আবলুসকাঠের সিন্দুক হইতে নিজের পছন্দসই রঙের কাপড় বাহির করিয়া তাহাকে পরাইয়া দিয়াছেন। মনের মতো করিয়া সাজাইতে উীহার বড়ো আনন্দ। প্রায়ই প্রতিদিন হেমনলিনী তাহার সেলাই আনিয়া ক্ষেমংকরীর কাছে দেখাইয়া লইয়া যাইত ; ক্ষেমংকরী তাহাকে নৃতন-নূতন রকমের সেলাই সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন। এ-সমস্তই তাহার সন্ধ্যার সময়কার কাজ ছিল। বাংলা মাসিকপত্র এবং গল্পের বই পড়িতেও উৎসাহ অল্প ছিল না। হেমনলিনীর কাছে যাহা-কিছু বই এবং কাগজ ছিল, সমস্তই সে ক্ষেমংকরীর কাছে আনিয়া দিয়াছিল। কোনো কোনো প্রবন্ধ ও বই সম্বন্ধে ক্ষেমংকরীর আলোচনা শুনিয়া হেম আশ্চর্য হইয়া যাইত ; ইংরাজি না শিখিয়া যে এমন বুদ্ধিবিচারের সহিত চিন্তা করা যায় হেমের তাহা ধারণাই ছিল না । নলিনাক্ষের মাতার কথাবার্তা এবং সংস্কারআচরণ সমস্তটা লইয়া হেমনলিনীর তাহাকে বড়োই আশ্চর্য স্ত্রীলোক বলিয়া বোধ হইল । সে যাহা মনে করিয়া আসিয়াছিল তাহার কিছুই নয়, সমস্তই অপ্রত্যাশিত । 8ఏ ক্ষেমংকরী পুনর্বার জরে পড়িলেন। এবারকার জর অল্পের উপর দিয়া কাটিয়া গেল। সকালবেলায় নলিনাক্ষ প্রণাম করিয়া তাহার পায়ের ধুলা লইবার সময় বলিল, “মা, তোমাকে কিছুকাল রোগীর নিয়মে থাকিতে হইবে। দুর্বল শরীরের উপর কঠোরতা সহ্য হয় না।” ' ' ', ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আমি রোগীর নিয়মে থাকিব, আর তুমিই যোগীর নিয়মে থাকিবে । নলিন, তোমার ও-সমস্ত আর বেশিদিন চলিবে না। আমি আদেশ করিতেছি, তোমাকে এবার বিবাহ করিতেই হইবে।” নলিনাক্ষ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। ক্ষেমংকরী কহিলেন, “দেখো বাছা, আমার এ শরীর আর গড়িবে না ; এখন তোমাকে আমি সংসারী দেখিয়া যাইতে পারিলে মনের মুখে মরিতে পারিব। আগে মনে করিতাম একটি ছোটাে ফুটফুটে বউ আমার ঘরে আসিবে, আমি তাহাকে নিজের হাতে শিখাইয়া-পড়াইয়া মানুষ করিয়া তুলিব, তাহাকে সাজাইয়া-গুজাইয়া মনের স্বখে থাকিব। কিন্তু এবার ব্যামোর সময় ভগবান আমাকে চৈতন্য দিয়াছেন। নিজের আয়ুর উপরে এতটা বিশ্বাস