পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি Woo & রাখা চলে না, আমি কবে আছি কবে নাই তার ঠিকানা কী। একটি ছোটো মেয়েকে তোমার ঘাড়ের উপর ফেলিয়া গেলে সে আরও বেশি মুশকিল হইবে। তার চেয়ে তোমাদের নিজেদের মতে বড়ো বয়সের মেয়েই বিবাহ করে । জরের সময় এই সব কথা ভাবিতে ভাবিতে আমার রাত্রে ঘুম হইত না। আমি বেশ বুঝিয়াছি এই আমার শেষ কাজ বাকি আছে, এইটি সম্পন্ন করিবার অপেক্ষাতেই আমাকে বাচিতে হইবে, নহিলে আমি শাস্তি পাইব না।” تالي নলিনাক্ষ । আমাদের সঙ্গে মিশ খাইবে, এমন পাত্রী পাইব কোথায় ? ক্ষেমংকরী কহিলেন, “আচ্ছা, সে আমি ঠিক করিয়া তোমাকে বলিব এখন, সেজন্য তোমাকে ভাবিতে হইবে না।” আজ পর্যন্ত ক্ষেমংকরী অন্নদাবীবুর সম্মুখে বাহির হন নাই। সন্ধ্যার কিছু পূর্বে প্রাত্যহিক নিয়মানুসারে বেড়াইতে বেড়াইতে অন্নদাবাবু যখন নলিনাক্ষের বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন তখন ক্ষেমংকরী অন্নদাবাবুকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। র্তাহাকে কহিলেন, “আপনার মেয়েটি বড়ো লক্ষ্মী, তাহার পরে আমার বড়োই স্নেহ পড়িয়াছে । আমার নলিনকে তো আপনারা জানেন, সে ছেলের কোনো দোষ কেহ দিতে পারিবে না— ডাক্তারিতেও তাহার বেশ নাম আছে । আপনার মেয়ের জন্য এমনতরো সম্বন্ধ কি শীঘ্ৰ খুজিয়া পাইবেন ?” অন্নদাবাবু ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “বলেন কী। এমনতরো কথা আশা করিতেও আমার সাহস হয় নাই । নলিনাক্ষের সঙ্গে আমার মেয়ের যদি বিবাহ হয়, তবে তার অপেক্ষ সৌভাগ্য আমার কী হইতে পারে। কিন্তু তিনি কি—” ক্ষেমংকরী কহিলেন, "নলিন আপত্তি করিবে না। সে এখনকার ছেলেদের মতো নয়, সে আমার কথা মানে। আর, এর মধ্যে পীড়াপীড়ির কথাই বা কী আছে। আপনার মেয়েটিকে পছন্দ না করিবে কে ? কিন্তু এই কাজটি আমি অতি শীঘ্রই সারিতে চাই। আমার শরীরের গতিক আমি ভালো বুঝিতেছি না।” সে রাত্রে অন্নদাবাবু উৎফুল্প হইয়া বাড়িতে গেলেন। সেই রাত্রেই তিনি হেমনলিনীকে ডাকিয়া কহিলেন, “মা, আমার বয়স যথেষ্ট হইয়াছে, আমার শরীরও ইদানীং ভালো চলিতেছে না। তোমার একটা স্থিতি না করিয়া যাইতে পারিলে আমার মনে মুখ নাই। হেম, আমার কাছে লজ্জা করিলে চলিবে না ; তোমার মা নাই, এখন তোমার সমস্ত ভার আমারই উপরে।” হেমনলিনী উৎকণ্ঠিত হইয় তাহার পিতার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “ম, তোমার জন্ত এমন একটি সম্বন্ধ জাসিয়াছে যে, মনের